ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

কয়েকশ গ্রামে ঈদের নামাজ আদায়, পশু কোরবানি

কান্ট্রি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৬, জুন ৬, ২০২৫
কয়েকশ গ্রামে ঈদের নামাজ আদায়, পশু কোরবানি

চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে শনিবার (৭ জুন)। তবে দেশের বেশ কিছু জেলার বেশ কিছু গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে শুক্রবারই (৬ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে।

তারা আজ পশু কোরবানি দিচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো খবর:

চাঁদপুর: বিগত ৯৭ বছর ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদরা দরবার শরিফের পীর মাওলানা ইসহাকের (রহ.) অনুসারীরা (প্রায় অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা) সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।  

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দরবার শরিফসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে আজ উদযাপন হচ্ছে ঈদুল আজহা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দরবার শরিফের দুটি ঈদগাঁওয়ে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী লোকজন নতুন জামা কাপড় পড়ে ও সুগন্ধি মেখে ঈদের নামাজ আদায় করেন।  

ঈদের নামাজের প্রথম জামায়াত সাদরা দরবার শরিফ মাঠে সকাল সাড়ে ৭ টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ জামায়াতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।

এরপর দ্বিতীয় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা মাঠে সকাল ৮টায়। এ জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।

গোপালগঞ্জে থেকে প্রথমবারের মতো চাঁদপুর দরবার শরিফে আগাম ঈদ করতে এসেছেন সাইফ। তিনি বলেন, আমি সাদ্রা দরবার শরিফে এবারই প্রথম আগাম ঈদের নামাজ আদায় করেছি। আমার এখানে এসে ভালোই লাগছে। সামনের ঈদ করতে আসতে চেষ্টা করব।

স্থানীয় যুবক রাসেল বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দিনটি ছিল সারা পৃথিবীর জন্য আরাফার দিন। যা বাংলাদেশের জন্য বা অন্য কোনো দেশের জন্য আলাদা নয়। যেমন কেয়ামত সারা দুনিয়ায় একদিনেই হবে। সে হিসেবে গতকাল ছিল আরাফার দিন, আর আজ ঈদুল আজহার দিন। সেই কারণে আমরা ঈদ পালন করছি।

এদিকে পাশের উপজেলা ফরিদগঞ্জের টোর মুন্সীর হাট, সাচনমেঘ ও উভরামপুর গ্রামের একাধিক ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও মতলব উত্তর উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঈদ জামাত হয়।

তবে এসব এলাকায় সরকার ঘোষিত ৭ জুন ঈদুল উদযাপন করার মতো জনতার সংখ্যাও কম নয়। তারা রীতিমত শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানি করবেন।

স্থানীয় তথ্য বলছে, ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরিফের সেই সময়ের পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন। এ রীতি তার অনুসারীরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সঙ্গে পালন করে আসছেন। যার ফলে এখন সারা দেশেই এ পীরের অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে।

চাঁদপুর জেলায় যেসব গ্রামে আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে: হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানি এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।

মাদারীপুর: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুরেরও ২৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ আজ উদযাপন করছেন পবিত্র ঈদুল আজহা।  

জেলার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত পড়ান তাল্লুক গ্রামের মৌলভী বাড়ির মসজিদের ইমাম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।

জানা যায়, সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরিফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা প্রায় দেড়শ’ বছর আগে থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা বাহেরচর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, দৌলতপুর, কালিকাপুর, হোসনাবাদ, রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ি, বাহেরচর, কেরানীরবাট, রমজানপুর, কয়ারিয়া, রামারপুল, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, খাসেরহাটসহ জেলার ২৫টি গ্রামের মানুষ ঈদ উৎসব উদযাপন করছেন।

জামালপুর: জামালপুরের ইসলামপুর ও সরিষাবাড়ি উপজেলারও ২০টি গ্রামের মুসলমানরা আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।
সকালে বিভিন্ন মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও বাড়ির উঠানে ঈদের নামাজ আদায় করেন এসব গ্রামের প্রায় দুই হাজার মুসলমান।

ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রামভদ্রা ও সাপধরী ইউনিয়নের পশ্চিম মণ্ডলপাড়ায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সরিষাবাড়ি উপজেলার বলারদিয়া, বাউসী, সাতপোয়া, পঞ্চপীর, সাঞ্চারপাড়, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড়সহ ২০টি গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন।

স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, ইসলামী শরিয়া মতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ উদযাপন করা যায়। তাই তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন করেন।

পটুয়াখালী: আরবি তারিখের সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর গলাচিপা, বাউফল, দুমকি, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া ও সদর উপজেলার অন্তত ২৫টি স্থানে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার সকালে বদরপুর দরবার শরিফে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন সাইয়্যেদ আরিফ বিল্লাহ রব্বানী। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় মোনাজাত এবং পশু কোরবানি করা হয়।

স্থানীয়দের দাবি, তারা প্রায় একশ বছর ধরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করে আসছেন।

ভোলা: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ভোলার ১০টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে আজ।
সুরেশ্বর দরবারের পীরের অনুসারীরা প্রায় শতাধিক বছর ধরে এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।

শুক্রবার সকাল ৯টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলার মুলাইপত্তন গ্রামের মজনু মিয়ার বাড়িতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন সুরেশ্বর দরবারের অনুসারী মাওলানা মো. সিহাব।

এছাড়া চৌকিদার বাড়ি, পঞ্চায়েত বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

দিনাজপুর: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দিনাজপুরেরও অন্তত ৫০টি গ্রামের মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন আজ।  

শুক্রবার সকাল ৮টায় শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঈদের প্রধান জামাত হয়। এতে ইমামতি করেন হোলি কোরআন স্কুল অ্যান্ড মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।

নামাজ শেষে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে নির্যাতিত মুসলিম ভাই-বোনদের কারণে ঈদের পূর্ণ আনন্দ অনুভব করতে পারছি না। আল্লাহ যেন আমাদের প্রতিরোধের শক্তি দেন।

দিনাজপুর শহরের নিউটাউন, ফুলতলা, ইসলামবাগ, বোচাগঞ্জের ছাতইর, বিরলের ভাড়াডাঙ্গি, কাহারোলের জয়নন্দ, বিরামপুরের খয়েরবাড়ী, চিরিরবন্দরের রাবারড্যামসহ বিভিন্ন স্থানে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জামাতে প্রায় দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। জেলায় প্রায় দুই হাজার পরিবার সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।

ঝিনাইদহ: জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মুসলিমরা আজ আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। এরপর পশু কোরবানি দিয়েছেন সামর্থ্যবানরা।

শুক্রবার সকাল ৮টায় উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম। দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের শতাধিক মুসল্লি জামাতে অংশ নেন।

আয়োজকরা জানান, ২২ বছর ধরে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করছেন তারা।  

হরিণাকুন্ডু, পায়রাডাঙ্গা ও নিত্যনন্দনপুরে জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয় এবং খুতবায় কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরা হয়।

বরিশাল: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন কয়েক হাজার মানুষ। শুক্রবার সকালে বরিশাল শহর ও জেলার ১০ উপজেলার অন্তত ২০টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর পশ্চিম এলাহাবাদ জাহাগিরিয়া শাহছুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা আজ ঈদ উদযাপন করছেন। বরিশাল বিভাগে দরবারের প্রায় ৭৫টি মসজিদ রয়েছে।

বিভাগীয় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজি বাড়ি এলাকায়। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। নামাজ শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
এছাড়া জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, হরিনাফুলিয়া, সাহেবের হাট, বাবুগঞ্জের খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশা, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, চন্দ্রমোহন, পতাং ও লাহারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব স্থানে দরবার শরিফের প্রায় আড়াই হাজার অনুসারী রয়েছেন, যারা আগাম ঈদ উদযাপন করেন।

নওগাঁ: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার কলনিপাড়া এলাকায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মো. কামারুজ্জামান।

জামাতে নওগাঁর পোরশা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর, সাপাহার, বদলগাছী ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা অংশ নেন। পরে সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি দেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নামাজে অংশ নেন।  

নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়। আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জানান, গত ১০ বছর ধরে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে এখানে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। আমরা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করি, তাই তার দেখানো পথেই ঈদ উদযাপন করছি।

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি গ্রামের মানুষ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।

উপজেলার শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নের রাখালতলি ঈদগাহ, মাইটকুমড়া জামে মসজিদ, মাইটকুমড়া লস্করবাড়ি মসজিদ ও সহস্রাইল দায়রা শরিফে পর্যায়ক্রমে চারটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পশু কোরবানি দেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, এ অঞ্চলের মুসল্লিরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরিফের অনুসারী। তারা সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী আগাম রোজা ও দুই ঈদ উদযাপন করে আসছেন।

রাখালতলি ঈদগাহের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম জানান, তার বাবা আগে ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন, এখন তিনি তা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

সহস্রাইল দায়রা শরিফের সমন্বয়কারী মাহিদুল হক জানান, প্রায় শত বছর ধরে এখানকার মানুষ আগাম ঈদ করে আসছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চারটি গ্রামের শতাধিক পরিবার শুক্রবার ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।

সকালে সদর উপজেলার দেবীনগরের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এবং শিবগঞ্জের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।  
ছিয়াত্তর বিঘি এলাকার একটি আমবাগানে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন ইউসুফ আলী। এতে নারী-পুরুষ অংশ নেন এবং নামাজ শেষে কোরবানি করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, দেশে বিভিন্ন স্থানের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও আগাম ঈদ উদযাপনের রেওয়াজ রয়েছে।

মৌলভীবাজার: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মৌলভীবাজারের সার্কিট হাউস এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে সাতটার অনুষ্ঠিত এ ঈদের জামাতের ইমামতি করেন পীর আব্দুল মাফিক চৌধুরী।  

জেলা শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার শাবিস্থা নামক বাসার একটি রুমে এ জামাত পড়া হয়। জামাত চলাকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি যৌথ দল সেখানে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন ঈদ পালনকারীরা।

জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রমজান শুরু করেন মৌলভীবাজারের কিছু নারী-পুরুষ। একইসঙ্গে দুই ঈদের জামাতে আদায় করেন একই কায়দায়। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদুল আজহার জামাতে। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সার্কিট হাউজ এলাকার শাবিস্থা নামক বাসায় সমবেত হতে থাকেন নারী-পুরুষ মুসল্লিরা।  

জামাতে ইমামতি করা আব্দুল মাফিক চৌধুরী জামাত আদায়ের পূর্ব থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান আজ হাট থেকে গরু ক্রয় করে কোরবানি দেবেন। ময়মনসিংহ: সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে শুক্রবার (৬ জুন) ময়মনসিংহে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা।  ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঝাউগড়া সুরেশ্বরীয়া বেলায়েতিয়া পাক দরবার শরীফ মাঠে বিশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল এই দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত ২০তম ঈদুল আজহার জামাত।

সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও, মুসল্লিদের ঢল নামে সাড়ে আটটা থেকেই। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই বিশেষ জামাতে অংশ নিতে জড়ো হন। ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সৌদি আরবের সাথে একই দিনে এই দরবার শরীফে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়।

এবারের ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করেন কারি মাসুদুর রহমান সুরেশ্বরী। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দোয়ায় দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানানো হয়।

নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে প্রীতি ও সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবে কোলাকুলি ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি করেছেন হানাফি (রা.) মাযহাবের অনুসারীরা।

শুক্রবার (৬ জুন) সকালে ফতুল্লার লামাপাড়ায় হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া এতিম খানা ও হেফজ খানা মাদ্রসায় ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ কয়েকশ অনুসারী এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।

ঈদের জামাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। ঈদের নামাজ আদায় শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কোরবানি করেন হানাফি মাযহাবের অনুসারীরা।

ঈদের নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা জানান, তারা হযরত হানাফি (রা.) মাযহাবের অনুসারী। হানাফি মাযহাবের মতে, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ পালন করার বিধান রয়েছে। জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারীরা একশ বছর আগ থেকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা অনুযায়ী ঈদ পালন করে আসছেন।

এসআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।