ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

ফেনীতে টানা বৃষ্টি, শঙ্কা বন্যার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৩, মে ২৯, ২০২৫
ফেনীতে টানা বৃষ্টি, শঙ্কা বন্যার

ফেনী: উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে ফেনীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও মাঝারি মাত্রার দমকা হাওয়া বইছে।

বৃষ্টিবলয়ের কারণে বছর ঘুরে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জেলাবাসী। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় জনগণসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। আতঙ্ক নয়, বরং প্রস্তুতির ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে জেলাজুড়ে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়েছে। এতে জনজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি বাড়লে ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে এবং ভারতের উজান থেকে পানি আসলে নদীর পানিতে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবারও সেই ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে সকলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

আশরাফ আলী নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবহাওয়া নিয়ে নানা নেতিবাচক তথ্য দেখতে পাচ্ছি। এখন আবার এই বৃষ্টিবলয় নতুন করে দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়িয়েছে। গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবারও বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে।

ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বুধবার (২৮ মে) জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

সূত্র জানায়, জেলায় সম্ভাব্য ভারী বৃষ্টিপাতে বন্যার আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ, শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জেনারেটর, ব্যাটারি, রেডিওসহ যন্ত্রপাতি অক্ষত রাখার ব্যবস্থা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম খোলা, উদ্ধারকাজের জন্য সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিবিসহ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে বাংলাদেশের অংশে নদীর পানি বাড়বে। এখনো নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যার আশঙ্কায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার পরশুরাম উপজেলায় ২১টি ও ফুলগাজীতে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত জেলায় ৩৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ছে। আরও দুই দিন জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটি হলে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢলের ঝুঁকি বাড়বে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকায় জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ফুলগাজী ও পরশুরামের বাঁধ ভাঙনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে মেরামত ও প্রতিরোধমূলক কাজ চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, ৯০০ বস্তা শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে সবাইকে কাজ করতে হবে। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। জেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে এবং সময়ে সময়ে আপডেট দেওয়া হবে। সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।