ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

বছরের আলোচিত গুজব ‘লবণ’

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
বছরের আলোচিত গুজব ‘লবণ’

ঢাকা: চাহিদার তুলনায় দেশে লবণের উৎপাদন বেশি। বছরের শুরু থেকে লবণ নিয়ে কোনো অভিযোগ-আপত্তি না থাকলেও প্রতি বছরই কোরবানির আগে মোটা লবণের দাম বাড়িয়ে দেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মোটা লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে আসে কয়েক দিনের মধ্যেই।

সব কিছুই চলছিল ঠিক মতো। কিন্তু গত ১৮ নভেম্বর হঠাৎ সন্ধ্যা থেকে সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

মুহূর্তেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন ভোগ্যপণ্যের দোকানে। বাড়তি চাপে নিমিষেই ফুরিয়ে যায় বিভিন্ন দোকানের লবণ।

এ গুজব খবর সিলেট থেকে এক দিনের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। শুরু হয় লবণ কেনার মহোৎসব। ক্রেতার চাহিদা মাসে এক কেজি হলেও অনেকেই ৩ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত কিনে রাখেন। রাজধানীসহ দেশের কোথাও কোথাও ৩৫ টাকার প্রতি কেজি লবণ ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

সরকার-ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানানো হয়। ততক্ষণে লবণ কেনা শেষ দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের। গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অনেককেই জেল-জরিমানা করা হয়।

টানা এক সপ্তাহ ধরে চলে লবণ কেনা। তবে গুজব বিষয়ে বেশ সতর্ক ছিল ব্যবসায়ীরা। গুজব বুঝতে পেরে খুচরা লবণ ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের এক কেজির বেশি লবণ দেওয়া বন্ধ করে দেন। তাদের দাবি, বেশি লবণ নিলে বাজারে সংকট পড়বে, এ অজুহাতে দাম বাড়তে পারে।

এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হওয়ার পর বিক্রি খরায় পড়তে হয় দোকানিদের। চাহিদার তুলনায় বাড়তি লবণ কেনায় ক্রেতারা লবণ কিনতে আর দোকানে যাননি। পরে স্বাভাবিক হয় বাজার, বন্ধ হয় গুজবও। এটি মোকাবিলায় নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ।

তবে লবণ নিয়ে যখন লঙ্কাকাণ্ড, এ সময়ের মধ্যে নিরব থাকেনি সামাজিক মাধ্যমগুলো। অনেকেই এটি নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকেই লবণ কেনার ছবি পোস্ট করেন, কেউ কেউ আবার গুজবের নিউজ ভাইরাল করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তবে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর পদক্ষেপে গুজব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় দেশবাসী। গুজব মোকাবিলায় যেসব পদেক্ষপ নেওয়া হয়-
 
সরকারের পদক্ষেপ:
সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ৬ লাখ টনের বেশি লবণ মজুদ আছে। আর প্রতি মাসে দেশে ভোজ্য লবণের চাহিদা ১ লাখ ১০ হাজার টন। সেই হিসাবে ৫ মাসেরও বেশি সময়ের লবণ মজুদ আছে। এছাড়া নভেম্বরের শেষে নতুন মৌসুম শুরু হবে। এ বছর ১৮ লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড এবং চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।

কন্ট্রোল রুম: 
লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। কেউ লবণের দাম বেশি নিলে সেখানে যোগাযোগ করতে বলা হয়।  
 
ভোক্তা অধিদফতরের পদক্ষেপ:
লবণের দাম অতিরিক্ত চাইলে ক্রেতাদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
 
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ:
লবণের দাম নিয়ে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তৎপরতা চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা ১১৬ জনকে আটক করে। এছাড়াও ২৭ জনকে জরিমানা ও ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বলা হয়, গুজব ছড়ালে বা অতিরিক্ত দাম নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ৯৯৯-এ ফোন দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।

ব্যবসায়ীদের পদক্ষেপ:
দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
ইএআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।