ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সালতামামি

প্রশ্নপত্র ফাঁস, বইয়ের ভুল ও ঘুষ-বচন আলোচনায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
প্রশ্নপত্র ফাঁস, বইয়ের ভুল ও ঘুষ-বচন আলোচনায় প্রতীকী ছবি

ঢাকা: প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গোটা বছরই সরব ছিল শিক্ষাখাত। এইচএসসি পরীক্ষা থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী এমনকি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবার। পাশাপাশি বছরের শুরুতে বইয়ের ভুল ছিল মোটা দাগের আলোচনায়। আর বছর শেষে শিক্ষামন্ত্রীর ঘুষ-বচন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক।

সরকার থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতিসহ শিক্ষাখাতে বেশকিছু অর্জনও হয়েছে বিদায়ী ২০১৭ সালে। তবে সেগুলো ঢাকা পড়েছে নানা ত্রুটিতে।

 
 
বইয়ের ছাগল গাছে
নতুন বছরের প্রথম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘মৌ’ ও তৃতীয় শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুল ছাপা হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এ দু’টির শুদ্ধিপত্র দেওয়া হয়েছে পাঁচমাস পরে। এছাড়াও বেশ কিছু ভুল ছিল পাঠ্যবইয়ে।
 
প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণির ‘আমার বই’য়ে ছাগলের গাছে ওঠার ছবি, পঞ্চম শ্রেণির ‘সংকল্প’ কবিতাটির কয়েক জায়গায় ভুল এবং ‘ওড়না’ বিতর্ক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তবে সেগুলোর কোনো শুদ্ধিপত্র দেওয়া হয়নি।
 
বছরের শুরু ও শেষেও প্রশ্ন ফাঁস
ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদান-প্রদান হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শুরু থেকেই হোয়াটস্‌অ্যাপ, ফেসবুক, ভাইবারের মতো মাধ্যমে আদান-প্রদানের অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসলেকহেড গ্রামার স্কুল আলোচনায়
জঙ্গি মদদের অভিযোগে ০৬ নভেম্বর রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরদিন স্কুলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোর থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
 
ইউনেস্কো’তে অর্জন
ইউনেস্কো’র ৩৯তম সাধারণ সম্মেলনে বাংলাদেশ তৃতীয়বারের মতো সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটে সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।
 
এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংষ্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩৯তম সাধারণ সম্মেলনের জন্য ফের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।
 
সাত কলেজের জটিলতা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া সাত কলেজের পরীক্ষার সূচি নিয়ে উত্তপ্ত ছিল রাজধানীর নীলক্ষেত, শাহবাগ ও নিউমার্কেট এলাকা। পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের টিয়ার সেলে অন্ধ হয়ে যান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
 
১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের পর সাত কলেজের পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষকদের অনশন (ফাইল ছবি)
কওমি সনদের স্বীকৃতি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের বৈঠকের দু’দিন পর ১৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১১ এপ্রিল গণভবনে আল্লামা শফীর নেতৃত্বে কওমির আলেমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী সে সময় এই স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দেন।
 
আলোচনা-সমালোচনায় ঘুষ-বচন
বছরের শেষে এসে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘুষের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের  (ডিআইএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘সহনশীল হয়ে ঘুষ খাবেন’। তার এ বক্তব্যে দল-মত নির্বিশেষে সমালোচনা এসেছে।
 
পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, প্রকাশিত সংবাদে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। ডিআইএ’র অতীত বিষয়ক বক্তব্য বা তুলনাকে বর্তমানের কথা ধরে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। যা দুঃখজনক, বিভ্রান্তিকর ও শিক্ষামন্ত্রীর মূল বক্তব্যের বিপরীত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান নীতির পরিপন্থী।
 
প্রাথমিকে বহু প্রধান শিক্ষক নিয়োগ
দীর্ঘদিন বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকার পরে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৪৭০ জনকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয় সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৮ অক্টোবর নিয়োগ দিয়ে পদায়ন করেছে।
 
৩৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পাননি, তাদের মধ্য থেকে ৮৯৮ জনকে ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)।  

চলতি দায়িত্বে শিক্ষকরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সাড়ে ১৫ হাজারের মতো প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। পদ পূরণে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে চলতি দায়িত্বও দিয়েছে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক অচলাবস্থা দূরীকরণে পদোন্নতি যোগ্য সহকারী শিক্ষকদেরকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে অন্য স্কুলে পদায়ন করা হয়েছে এ বছর।  

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণের মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে গত ২৩ মে পদোন্নতি যোগ্য সহকারীদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে তাদেরকে দূরে পাঠিয়ে জটিলতাও দেখা দিয়েছে।
 
‘পুল’ শিক্ষকদের নিয়োগ
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শূন্যপদে ‘পুল শিক্ষক’দের নিয়োগ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। ২০১১ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির পর উত্তীর্ণ ৪৪ হাজার ৬০৯ জনের মধ্যে ১২ হাজার ৭০১ জনকে নিয়মিত সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
 
উত্তীর্ণ বাকি ১৫ হাজার ১৯ জনকে ভবিষ্যতে নিয়োগের জন্য ‘পুল শিক্ষক’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর নতুন নীতিমালা অনুসারে পুলভূক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ শুরু হলেও সবাই নিয়োগ পাননি। নিয়োগের জন্য তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। রায় পক্ষে এসেও নিয়োগ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছিলেন তারা।
 
প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন
বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করেন। বেশ কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ২৫ ডিসেম্বর তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।