ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

কক্সবাজারে ঝরে গেছে ৪ শতাধিক প্রাণ

নুপা আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৪
কক্সবাজারে ঝরে গেছে ৪ শতাধিক প্রাণ

কক্সবাজার: নানা ঘটনা, ‌দুর্ঘটনা ও রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যদিয়েই শেষ হলো ২০১৩ সাল। অস্বাভাবিকভাবে ৪ শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনার মধ্যদিয়ে একটি বছর অতিবাহিত করেছেন কক্সবাজার জেলাবাসী।



বছরজুড়ে কক্সবাজার রাজনৈতিক সংঘাত ও সড়ক র্দুঘটনার জন্য সারাদেশে আলোচিত হয়েছে নানাভাবে। একই সঙ্গে সাগরে দস্যুদের তাণ্ডব ও মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য ছিল ব্যাপক আলোচিত।

এ রাজনৈতিক সংঘাত, সড়ক র্দুঘটনা এবং দস্যুর হাতে প্রাণ হারিয়েছে ১৫৫ জনের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৭টি আলোচিত রাজনৈতিক সংঘাতের কবলে প্রাণ দিয়েছেন ১২ জন। এছাড়া বছর জুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছে ২ শতাধিক মানুষ। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘনায় প্রাণ হারিয়েছে ৯৫ জন ও ২টি আলোচিত দস্যুতার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৮ জন।

এছাড়া কক্সবাজারে এ এক বছরে আলোচিত খুন, সাগর, নদী ও পুকুরে ডুবে, বিদ্যুতপৃষ্ঠ হয়ে এবং বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়াসহ নানাভাবে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে আড়াই শতাধিক মানুষের।

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী মুক্তি পরিষদের ব্যানারে সংঘটিত তাণ্ডবে নিহত হন ৩ জন।

২৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ও পেকুয়ায় সাঈদীর ফাঁসির রায় ইস্যুতে নিহত হন ২ জন। ৫ মার্চ চকরিয়া উপজেলায় নিহত হন যুবলীগের এক কর্মী।

ওই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জামায়াত-শিবিরের এ তাণ্ডবে বিচ্ছিন্নভাবে চলে ডিসেম্বরের পর্যন্ত। এর মধ্যে আবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটে অক্টোবর মাসে। ২৫ অক্টোবর চকরিয়ায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত কর্মীর সংঘর্ষে নিহত ২ জন। ২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়া উপজেলায় জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ৩ জন। ২৯ নভেম্বর চকরিয়ায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে আরো একজন মারা যান ।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, কক্সবাজারে গত এক বছরে ৪ শতাধিক মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুনের সংখ্যা হল ৭১, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৯৫ জন, ৫০ জন জেলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে।

তথ্য মতে, কক্সবাজারের জানুয়ারি মাসে ২৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সড়ক র্দুঘটনায় ৫ জন নিহত হন। পাহাড় ধসে মারা যান একজন, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২ ডাকাত, ১২ জন জেলে হত্যা, ৩টি খুন, নাসাকার গুলিতে এক জেলে নিহত হয়েছেন। আত্মহত্যার ঘটনা একটি ও মৃতদেহ পাওয়া গেছে একটি।

ফেব্রুয়ারি মাসে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনা ৩৯টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতের ৩টি ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২ জন। এর মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ব্রিজ ভেঙে একটি পিকনিক বাস নদীতে পড়ে যায়। এতে মারা যায় ২০ জন। ওই মাসে বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহত, বিদ্যুৎপৃষ্টে একজন, একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রহস্যজনক মৃত্যু, লাশ উদ্ধার আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ৯ জন।

মার্চ মাসে একটি রাজনৈতিক সংঘাতে একজনের মৃত্যুসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ জনের। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন, খুনের শিকার ৫ জন, আত্মহত্যা, রহস্যজনক মৃত্যু এবং লাশ পাওয়ার তালিকায় রয়েছে ৭ জন।

এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনাসহ অস্বাভাবিক মৃত্যু তালিকায় রয়েছে ৬৩ জন। এর মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার অদূরে ৩৬ জেলে হত্যা করা হয়। ১ এপ্রিল এসব জেলের মৃতদেহ ভেসে আসলে উদ্ধার করা হয়। ওই মাসে ১০ জন খুন, বজ্রপাতে ৭ জন ও অন্যান্যভাবে ৩ জন নিহত হন।

মে মাসে অস্বাভাবিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে ৬৬ জন। এর মধ্যে টেকনাফ, উখিয়ার বঙ্গোপসাগরের উপকূলে একে একে ভেসে আসে ৩৮ রোহিঙ্গার মৃতদেহ। এছাড়া আরো ৪ জনের জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে। ওই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন, বজ্রপাতে ৭ জন, পানিতে ডুবে ২ জন ও বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহত ও খুন হন ৮ জন।

জুন মাসে আত্মহত্যা ও লাশ উদ্ধারে ১৩ ঘটনাসহ ৩৪ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জন, ডুবে ৬ জন, খুনে ৫ জন, পাহাড় ধ্বসে একজন, বজ্রপাতে একজন, বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহত হয়েছে।

জুলাই মাসে ৩১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে খুন হয়েছে ১৩ জন, ডুবে মারা গেছেন ১০ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ জন, রহস্যজনক মৃত্যু ও লাশ উদ্ধার হয়েছে ৩ জনের।

আগস্ট মাসে ৪১ জন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে ডুবে মারা গেছেন ২০ জন। খুন হয়েছে ৭ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জন, বিদ্যুৎ পৃষ্টে মারা গেছেন একজন, রহস্যজনক মৃত্যু, লাশ উদ্ধার, আত্মহত্যা করেছে ১০ জন।

সেপ্টেম্বর মাসে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এতে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ৮ জনের, সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন, ডুবে ২ জন, বিদ্যুৎ পৃষ্টে ৩ জন মারা যান। খুন হন একজন।

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সংঘাতে ৫ জনের প্রাণহানিসহ ২৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক র্দুঘটনায় ৩ জন, বন্দুকযুদ্ধে ২ ডাকাত, বিদ্যুৎ পৃষ্টে একজন, বজ্রপাতে ৪ জন মারা যান। খুন হন ৪ জন এবং মৃতদেহ উদ্ধারসহ অন্যান্যভাবে মারা যান ৭ জন।

নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সংঘাতে একজনের মৃত্যুসহ অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এর মধ্যে ১৪ নভেম্বর উখিয়া ২টি জিপের সংঘর্ষে ৬ জন নিহতসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে ১৯ জনের। খুন হন ২ জন, অন্যান্যভাবে মারা যান ৪ জন।

ডিসেম্বরের প্রথম ২৬ দিনে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এর মধ্যে খুন হয়েছেন ৩ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ জন, বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছেন একজন ও অন্যান্যভাবে মারা গেছেন ৭ জন।

নাশকতায় প্রায় ২ কোটি টাকা গাছ কর্তন, সড়কের ব্রিজ নস্ট, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ভেতরে ২০১৩ সালকে বিদায় দিয়ে নতুন বছর ২০১৪ সালকে বরণ করতে যাচ্ছেন কক্সবাজার জেলাবাসী। এ বছরে এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিপরীতে স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রত্যাশা সবার। সবাই চান নিরাপদ সড়ক এবং রাজনৈতিক সংঘাতহীন কক্সবাজার।

বাংলাদেশ সময়:  ০৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৪
সম্পাদনা: শামীম হোসেন/শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।