ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

মন্দা সময়ে মন্দা অডিও বাজার

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩
মন্দা সময়ে মন্দা অডিও বাজার আলাউদ্দিন আলী ও নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ

২০১৩ সালে অ্যালবাম প্রকাশের সংখ্যাটা কম না। কিন্তু এতসব অ্যালবাম বাজারে আসলেও মনে রাখার মতো অ্যালবাম কতটা ছিল।

এর বাইরে পাইরেসি এড়াতে এবার ডিজিটালি অ্যালবাম প্রকাশের হার বেড়েছে অনেকাংশে। এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংগীতাঙ্গনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গুণী সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী গত বছরের সংগীতভূবনকে যেভাবে দেখলেন...

আলাউদ্দিন আলী : এ বছর তেমন নতুন কোন প্রতিভাবান শিল্পী বেরিয়ে আসেনি। বলা যায়, গান করে সর্বসাকুল্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এরকম শিল্পী নেই বললেই চলে। আর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তেমন অডিও ব্যবসা হয়নি। আর ভালো শিল্পীদের অ্যালবাম ও গান খুবই কম এসেছে।

পাশাপাশি অডিও পাইরেসি এত পরিমাণ বেড়েছিল যে, একটি শিল্পী বা প্রতিষ্ঠান অ্যালবাম প্রকাশের তিন চার ঘণ্টার মধ্যেই তা পাইরেসি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে শিল্পী ও প্রযোজকদের দ্রুত সমঝোতা প্রয়োজন। চলচ্চিত্রশিল্পেও এর প্রভাব দেখা গেছে। তেমন কোন জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গান বেরিয়ে আসেনি, যা আজীবন মানুষের মনে বেঁচে থাকবে। আর অডিও বা ভিডিও পাইরেসির জন্য সরকারিভাবে একটা শক্ত আইন দরকার।

আমাদের দেশের মানুষের এমনিতেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেছে। তাই এই অডিও শিল্পকে বাঁচানোর জন্য এ ব্যবস্থা খুবই দরকার।

তাই আমার মতে, এ বছরে অডিও শিল্পে তেমন কোন উত্তোরণ হয়নি। খুব ভালো শিল্পী, গীতিকার বা সুরকার বের হয়ে আসেনি এ বছর। আর ভালো শিল্পী, গীতিকার বা সুরকার না বের হয়ে আসলে এ শিল্পের উন্নতি হবে কি করে?

শিল্পীদের জন্য খারাপ সময় কেটেছে এবার। বছর ঘুরে মিউজিক বাজার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমনই বললেন এমআইবি (মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জি সিরিজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ। তার মতে-

এ বছর মিউজিক শিল্পে তেমন কোন উত্তোরণ চোখে পড়েনি। তবে ভালো-মন্দ মিলে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কোন নতুন শিল্পী পাওয়া যায়নি। তবে উৎসাহী ছেলে মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সম্ভাবনা অনেক।

সাড়া জাগানো মূলক কাজের সংখ্যা কমলেও অ্যালবাম নিয়ে নিত্যনতুন চিন্তা-ভাবনা এসেছে এ বছর। বিশেষ করে অনলাইনে গান বিক্রয় ও শিল্পীদের বেশ কিছু উন্নতমানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ হয়েছে। এর ফলে শিল্পীদের অনেক কাজই দর্শক দেখার ও বিবেচনা করার সুযোগ পেয়েছে।

এ বছরও বেশ কিছু মৌলিক অ্যালবাম বাজারে এসেছে। এরমধ্যে নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, আপেল মাহমুদ, কুমার বিশ্বজিৎ এর ৪০টি গানের সংকলন নিয়ে অ্যালবাম, বাপ্পা মজুমদারের একক‘বেঁচে থাক সবুজ’, প্রিন্স মাহমুদ, ব্যান্ড ‘চিরকুট’সহ প্রায় ৩০০ এর উপরে অ্যালবাম বের হয়েছে এ বছর। আর নতুন শিল্পীদের মধ্যে অরণ্য, মিনার, এফ এ সুমন, বেলাল খান, পড়শী, ইমরান,পুজা, নাওমিসহ অনেকেই ভালোকাজ করেছে।

আর দৃশ্যমান জিনিস সিডি সবসময়ই বাজারে থাকবে, তবে তা সংরক্ষণের পর্যায়ে চলে গেছে। কারণ আগের সময়ে এলপি থেকে আসল ক্যাসেট, এরপর ক্যাসেট থেকে সিডি আসে। আর বর্তমানে সিডি থেকে ডিজিটালি অ্যালবাম প্রকাশের ব্যবস্থা নিচ্ছে শিল্পীরা। বর্তমানে আমরা জি সিরিজ থেকে রেডিও ওয়াপ ক্লাব করছি। নাম ‘রেডিও জি’। এখানে সকল শিল্পীদের জনপ্রিয় গানগুলো থাকবে, সেখান থেকে মাসিক ১০ টাকা বা ২০ টাকা হারে শ্রোতারা গানগুলো শুনতে পারবেন। আর এখান থেকে শিল্পীরা রাজস্ব আয় পাবেন। এটাও শিল্পীদের জন্য ও ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য সুখবর।

তবে সত্যি বলতে এ বছর শিল্পীদের আয় কমেছে। কারণ দেশের রাজনৈতিক অবস্থার কারণে বছরজুড়েই ছিল কনসার্টে খারাপ অবস্থা। যেখানে আগস্ট মাসের পরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় শো বা বিভিন্ন ইভেন্টে শিল্পীদের গান করার হিড়িক পড়ে যায়। শিল্পীদের সিডিউল পাওয়া যায় না, সেখানে এবার অনেক শিল্পীদের সেটা হয়ে উঠেনি।

এর পাশাপাশি অডিও পাইরেসি ছিল। যার ফলে অনেক শিল্পীই অ্যালবাম প্রকাশ করার সাহস করেনি। এজন্য আইনের শাসনের সুপ্রতিষ্ঠা দরকার। তাহলে গীতিকার, সুরকার, শিল্পী থেকে শুরু করে  মিউজিক কোম্পানির মালিক পর্যন্ত টাকা পাবেন। কেউই ঠকবে না, কেউ কাউকে ঠকানোর চেষ্টাও করবে না। সবকিছু মিলে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে ২০১৩সাল মিউজিক জগতের সবার জন্য শুভকর ছিল না।

বাংলাদেশ সময় : ১৩৪০ ঘণ্টা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩
সম্পাদনা : গোলাম রাব্বানী, বিভাগীয় সম্পাদক বিনোদন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।