ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

বছরজুড়ে আলোচনায় থেকেছেন জিএম কাদের, রেখেছেন জাপাকেও

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
বছরজুড়ে আলোচনায় থেকেছেন জিএম কাদের, রেখেছেন জাপাকেও

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদে কাগজে কলমে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) থাকলেও জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি দলটি। ঘরোয়া সভা ও প্রেস রিলিজেই মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দলের কর্মসূচি।

 

২০২২ সালের পুরো সময়টা ঘর সামলাতেই ব্যস্ত সময় পার করেছে দলটি। অন্তর্দলীয় কোন্দল ভুলে ২০২৩ সালে নতুন বছরের যাত্রা শুরু করে জাতীয় পার্টি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিবকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।

একই মঞ্চে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের চলার পথে মান অভিমান থাকবেই। কিন্তু দলের স্বার্থে সব ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাতীয় পার্টি একটা পরিবার, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সেই পরিবারের সদস্য। দলের যেকোনো সংকট, সমস্যা জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। জাতীয় পার্টি সংবিধান মোতাবেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা যদি মিলেমিশে থাকি, ঐক্যবদ্ধ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে জাতীয় পার্টি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।  

দলের ঐক্যের ডাক দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের সই করা এক প্রেস  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই'। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ, এমপি ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে এবং সে লক্ষ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার জন্য পার্টিকে সুসংগঠিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি। তবে ঐক্যের কথা বললেও নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে রওশনপন্থি এবং জি এম কাদের পন্থিদের মধ্যে বিরোধ চরম আকারে ধারণ করে। দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রওশনপন্থিরা। এরই মধ্যে সরকারের কাজের সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।  

তিনি বলেন, কাউকে ক্ষমতায় নিতে, কারো বি-টিম হতে বা কারো দাসত্ব করতে আমাদের রাজনীতি নয়। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করবো। কারো জিম্মি বা ক্রীতদাস হতে রাজনীতি করছি না। রাজনীতিতে বন্ধুত্ব করতে হলে সমানে সমান বন্ধুত্ব করবো, চোখে চোখ রেখে বন্ধুত্ব করবো। রাজনীতিতে বন্ধুত্বে নামে কারো কাছে মাথা নত করবো না।  

সরকারের সমালোচনা যখন মুখর জি এম কাদের ঠিক তখনি (৪ মে) জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের আগামী নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে জনগণ। তাই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা সফল হবে না।  

সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্দোলন লড়াইয়ের নামে দেশে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। নতুন পুরাতন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।  

তার এ ঘোষণার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রওশন ও কাদেরের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে রূপ নেয়। জাতীয় পার্টি ২৮৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সেখানে রওশনপন্থিদের ঠাঁই না হওয়ায় নিজেও মনোনয়ন নেননি রওশন এরশাদ। তবে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে রওশনপন্থিদের বাদ দিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরসহ তার দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও রওশন এরশাদ ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও জাতীয় পার্টি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।  

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তিনি দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না। তিনি দলের কেউ নন। তাকে নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।  

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালে দলটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেলেও দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন বছর ২০২৪ সালে দলটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। যদিও দলের বড় অংশটি জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকলেও হেবিওয়েট অনেক প্রার্থী সরকারের সমঝোতায় ২৬টি আসনের মধ্য থেকে বাদ পড়ায় দলের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারপরও নতুন বছরে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে থাকবে দলটি এমনটিই প্রত্যাশা তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।