ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

সালতামামি

সর্বোচ্চ আদালতের যত আলোচিত মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
সর্বোচ্চ আদালতের যত আলোচিত মামলা

ঢাকা: করোনা পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বছরজুড়ে দেশের উচ্চ আদালতের কিছু মামলাও ছিল বেশ আলোচিত।

এর মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও নায়িকা নিপুণ আক্তারের মামলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার রায়, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিলের রায়, চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা নিয়ে রায়, সব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের হলফনামা বাধ্যতামূলক করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শের রায় ইত্যাদি।

ড. তাহের হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহেরকে হত্যার দায়ে একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ১৬ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। আর অপর আসামিকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। পরে তারা রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন। যেটি শুনানির অপেক্ষায়।

শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জয়ী হন জায়েদ খান। পরে আপিল বোর্ড জায়েদ খানকে বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচনী আপিল বোর্ড। আপিল বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন জায়েদ খান। তার রিটের শুনানির পর নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে গত ২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। পরে নিপুণ আক্তারের আবেদনে ৬ মার্চ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিত করে স্থিতাবস্থা দেন চেম্বার আদালত। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে গত ২১ নভেম্বর তাকে আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত রেখে সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশও (স্টেটাস কো) তুলে নেওয়া হয়। ফলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হাজী সেলিমের কারাবাস ও জামিন
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের আপিলের রায় ঘোষণা করা হয় ২০২১ সালের ৯ মার্চ। রায়ে হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। গত ২২ মে ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন হাজী সেলিম। ওই দিন বিচারিক আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে হাজি সেলিমকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৪ মে সাজার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে আবেদন করেন তিনি। সঙ্গে জামিন চেয়েও আবেদন করেন তিনি। গত ৬ ডিসেম্বর হাজী সেলিমকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়ে সে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত তাকে জামিন দেন আপিল বিভাগ।

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি
সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ফৌজদারি অপরাধে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে গত ২৫ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত করেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ।

চেক প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত মামলার রায়
গত ২৩ নভেম্বর চেক প্রত্যাখ্যান মামলার বিষয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। চেক প্রত্যাখ্যান মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত তিন ব্যক্তির আপিল গ্রহণ করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। ঋণ আদায়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা সরাসরি খারিজ করে সেগুলো অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতেও বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।

পরবর্তীতে ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনে গত ১ ডিসেম্বর রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এর আগে গত ২৮ আগস্ট চেক প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত আরেকটি রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা
গত ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থীদের ৭টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার রায়ে ১৭ নভেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, অন্যান্য নির্বাচনে নোমিনেশন পেপারের সঙ্গে ৭টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা দেওয়া হয় না। যদিও ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ২৬(৩) এ হলফনামা দেওয়ার কথ বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিতে শুধু প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হলফনামা দেওয়ার কথা নেই। হাইকোর্ট বলেছেন, যেহেতু বিধিমালার ওপরে আইন প্রাধান্য পাবে সে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রার্থীদের হলফনামা দাখিল করতে হবে।

কাবিননামায় কুমারী শব্দ বাতিলের রায়
মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিননামার ৫ নম্বর কলামে থাকা ‘কুমারী’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থী এবং তা বাতিল ঘোষণা করে গত ১৭ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ‘কাবিননামায় কুমারী শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থী’। এ কারণে রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কাবিননামার ফরম থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।