ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

যে কারণে সেহরি খাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
যে কারণে সেহরি খাই বিশেষ কলাম

রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে আহার করার নাম সেহরি। ‘সেহরি’ খাওয়া সুন্নত এবং আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উম্মতের জন্য তা আল্লাহতায়ালার বিরাট অনুদানবিশেষ।
 
 

পূর্বেকার নবী (আ.) এর উম্মতদের জন্য সেহরি খাওয়ার বিধান ছিল না। প্রথম দিকে আমাদের উপরও হুকুম ছিল, ‘রোজা রেখে রাতের বেলা একবার ঘুমিয়ে পড়লে পরে জাগ্রত হয়ে আর পানাহার বা স্ত্রীর কাছে যেতে পারবে না।

পরে আল্লাহ পাক যখন দেখলেন, এ বিধান প্রিয় নবীর উম্মতের জন্য খুবই কষ্টকর, দেখা গেল সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ রোজার উপবাস ক্লান্ত শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছেন। হঠাৎ তন্দ্রার মধ্যে মানবীয় দুর্বলতায় আপন স্ত্রীদের সাহচর্যে লিপ্ত হয়েছেন।  

পরদিন নবী পাকের দরবারে এসে অনুতপ্ত কণ্ঠে এ গোপন বিচ্যুতির কথা অকপটে ব্যক্ত করেছেন, ক্ষমা লাভের প্রত্যাশায় তখন দয়াময় আল্লাহ সাহাবাদের এ অপারগতাকে ক্ষমা করে দেন।  

এমনকি তার অপার অনুগ্রহ অনুদানের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়ে সেহরি খাওয়ার অনুমতি দেন (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, সুরা বাকারা, ১৮৭নং আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গ)।  

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর এবং যা কিছু আল্লাহ তোমাদের জন্য দান করেছেন, তা আহার কর। আর খানাপিনা কর, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর পরদিন সন্ধ্যা নাগাদ রোজা সম্পূর্ণ কর। (সুরা বাকারা : ১৮৭)।  

এভাবে রোজার দিনে রাতের ভাগটা সম্পূর্ণ খোলা হয়ে যায় আমাদের জন্য। রোজার প্রস্তুতিতে রাতের শেষ ভাগে সেহরি খাওয়ার সুন্দর সুন্নত নিয়ম প্রবর্তিত হয়। হাদিস শরিফে সেহরিকে উম্মতে মোহাম্মদিয়ার বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে, আমাদের রোজা এবং আহেলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিস্টানদের) অনুসারীদের রোজার মধ্যে (অন্যতম) পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া (মুসলিম শরিফ-মিশকাত)।  

বস্তুত সেহরি আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের বিরাট অনুগ্রহ ও অনুদান, এবং রাসুল (সা.) এর সুন্দরতম সুন্নত। এর মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের সামগ্রিক জীবনের জন্য বৃহত্তম কল্যাণ, বরকত ও প্রাচুর্য। বোখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত, ‘হুজুর সা. এরশাদ করেছেন তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত মিশে রয়েছে। ’ (মিশকাত)।  

অপর এক হাদিসে হজরত এরবায বিন সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মাহে রমজানে হজরত রাসুল (সা.) আমাকে ‘সেহরি’ খাওয়ার দাওয়াত দিলেন এবং তিনি এ বলে ডাকলেন, তুমি বরকতপূর্ণ আহারের জন্য এসো। ’ (আবু দাউদ, নাসায়ি)

হে আল্লাহ, আমাদের প্রিয়নবী (সা) এর সেহরির মতো আমাদের সেহরি খাওয়াকেও বরকতময় করে দিন।

লেখক
মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

বাংলাদেশ সময়: ০২৩১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৮
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।