ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

মিতব্যয় সম্পদ বৃদ্ধি করে, কৃপণতা জান্নাত থেকে দূরে ঠেলে দেয়

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
মিতব্যয় সম্পদ বৃদ্ধি করে, কৃপণতা জান্নাত থেকে দূরে ঠেলে দেয় ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত হবে ১৬তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে, সম্পদ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হওয়ার উপকারিতা।



এ বিষয়ে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই ... যারা ব্যয়ের সময় অপব্যয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং এ দু’য়ের মাঝে মধ্যপন্থায় তারা থাকে। ’

মিতব্যয় প্রসঙ্গে সূরা বনি ইসরাইলের ২৬-২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। ... তুমি (কার্পণ্য করে) তোমার হাত ঘাড়ে আটকে রেখ না; আবার (অধিক ব্যয় করতে যেয়ে) তা সম্পূর্ণ প্রসারিত করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে। ’

অর্থ ব্যয়ের তিনটি পন্থা। অপব্যয়, কার্পণ্য ও মিতব্যয়। অপব্যয় আর কার্পণ্য উভয়টাই নিন্দিত স্বভাব ও গোনাহের কাজ। আল্লাহর ওলি ও প্রিয় বান্দাদের লক্ষণ হলো, তারা সম্পদ ব্যয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে থাকে। তারা অপব্যয় ও কার্পণ্যকে পরিহার করে মিতব্যয়ী হয়।

ইসলামি স্কলাররা অপচয় বা অপব্যয়ের বিভিন্ন পরিচয় দিয়েছেন। হজরত ইবনে মাসউদ ও ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে, ‘অপ্রয়োজনে ব্যয় করাই হল অপব্যয়। ’ মুজাহিদ বলেছেন, ‘কেউ যদি তার সমস্ত সম্পদকে প্রয়োজনে ব্যয় করে থাকে, তবে তাকে অপব্যয় বলা যাবে না। কিন্তু অপ্রয়োজনে অতি সামান্য পরিমাণও ব্যয় করে থাকে তাকে অপব্যয় বলা হবে। ’

কাতাদার মতে অপব্যয়ের ক্ষেত্র তিনটি। ‘গোনাহের কাজে সম্পদ ব্যয় করা সম্পদের অপব্যয়। অপ্রয়োজনে সম্পদ ব্যয় করা সম্পদের অপব্যয়। ক্ষতিকর কাজে সম্পদ ব্যয় করা সম্পদের অপব্যয়। ’

আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজন অনুপাতে ব্যয় করাটা ইসলামের কাম্য। অর্থ থাকতে নিজে কষ্ট করা, স্ত্রী ও সন্তানকে কষ্টে রাখা, নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের দেখাশোনা না করা, পাড়া-প্রতিবেশিদের খোঁজ-খবর না নেওয়া হারাম। এগুলো হল কৃপণতা। আবার অঢেল সম্পদ থাকলেও প্রয়োজনের অধিক অতিরিক্ত ব্যয় করা অপব্যয়ের শামিল।

মনে রাখতে হবে, মিতব্যয়, অপব্যয়, কার্পণ্য এগুলো আপেক্ষিক বিষয়। ব্যক্তি, সমাজ, পরিবেশ, কাল ভেদে এগুলোর পরিচয় বা পরিমাণ বেশ-কম হবে।

দিনের বেলা জানালা বন্ধ রেখে বাতি জ্বালানো, বৈদ্যুতিক পাখা ছেড়ে দিয়ে কামরার বাইরে চলে যাওয়া, পানির কল বন্ধ না করা, গ্যাসের চুলা নিভিয়ে না রাখা এগুলো ঘৃণ্য অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত।

যেকোনো অপচয় দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় উভয়ই নিষিদ্ধ। অপচয় ও অপব্যয় যে পরিবার ও সমাজে আর্থিক দৈন্যতা বাড়ায়। অপচয় ও অপব্যয়ের নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইসলামে তা নিষিদ্ধ। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে বৈষয়িক ক্ষতির পাশাপাশি আত্বিক ক্ষতিও ঘটে। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে বরকতও হ্রাস পায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।

বাংলাভাষী একজন কবি এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি/ আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ বাতি। ’

অর্থাৎ আজ যে অপচয়কারী ও বিলাসী, কাল সে ভিখারী ও পরমুখাপেক্ষী। এটা ব্যক্তি জীবনের মতো রাষ্ট্রীয় জীবনেও সত্য।

সব মিলিয়ে ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার উপদেশ দেয় এবং ঐশী অনুগ্রহের ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ও অর্থ-সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে। মিতব্যয় মানুষের সম্পদকে বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত রাখে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষ ইহকাল ও পরকাল দু’টোকেই হারায়।

আরেকটি বিষয়, মিতব্যয় আর কৃপণতা কিন্তু এক নয়। মিতব্যয় হচ্ছে- যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যয় করা ও সম্পদের অপচয় না করা। কিন্তু কৃপণতা হলো, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় না করা। এ কারণে ইসলামে অপচয় ও অপব্যয়ের মতো কৃপণতাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য প্রদান, অনাথ-ইয়াতিমদের লালন-পালন, নিঃস্ব ব্যক্তিদের উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করাকে মুসলমানদের কর্তব্য বলে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কৃপণরা তা করে না। এ কারণেই কৃপণতা মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘন্টা, জুন ২১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।