ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ইরানে রোজায় বৈচিত্র, নিরবে ঈদ উদযাপন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
ইরানে রোজায় বৈচিত্র, নিরবে ঈদ উদযাপন

ইরান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলোর একটি।

এখানে হিমালয়ের পরেই এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ অবস্থিত। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই শিয়া। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলটি শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ইরানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার আছে।

ইরানে ৮৫ ভাগ লোক শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত আর সুন্নি মাত্র ১৫ ভাগ।   শিয়া-অধ্যুষিত এ দেশটিতে রমজানের ২১তম দিনে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদত বরণের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। শিয়া ধর্মমতে, এ মাসের ১৯ তারিখে হজরত আলী (রা.) ছুরিকাহত হন এবং ২১ তারিখে মারা যান। ইরানিরা অনেক সময় এই তিন দিনকে ‘পুনরুত্থানের রাত’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। এই দিনগুলো শোকের কাল হিসেবে পালন করা হয়। কেউ কেউ রাস্তায় নেমে হজরত আলী (রা.)-এর কষ্ট আর তার মৃত্যুতে প্রকাশ্য শোক পালন করেন। অন্যরা একান্তে শোক পালন করেন বা স্থানীয় মসজিদে অন্যদের সঙ্গে মিলে রাত জেগে নামাজ পড়েন, কোরআন তেলওয়াত করেন।

তবে ইরানের বিভিন্ন এলাকা এবং গোত্রের রোজা পালনের রীতিনীতিতে আছে তারতম্য। সিরাজ শহরে শাবানের শেষ শুক্রবার থেকেই শুরু হয় রমজান পালনের উৎসব। উত্তর প্রদেশের ইরানিরা রমজানের কয়েকদিন আগে থেকেই রোজা রাখে। তাদের ভাষায় এই রীতিকে বলে ‘পিশাশো’। -সূত্র: দেশে দেশে ইসলাম ও মুসলমান, পৃষ্ঠা- ১৮৯

ইরানি আলেম এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পুরো রমজান মাস কোরআন-হাদিস চর্চা, ওয়াজ-নসিহত এবং দিক-নির্দেশনা দানের জন্য সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে ছড়িয়ে পড়েন। যা দেশবাসীকে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-প্রজ্ঞায় আলোকিত করে তুলে। এজন্য তারা জনসাধারণ থেকে অর্থ বা সাহায্য নেন না। বরং গ্রান্ড আয়াতুল্লাহ সাহেবান তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। সামগ্রিকভাবে রমজান মাস ইরানের চেহারা ও ইরানি জনগণের মন মানসিকতা দারুণভাবে বদলে দেয়।

ইরানে রমজান মাসে প্রায় সবাই কোরআন তেলাওয়াত করেন। এটা তাদের সাধারণ অভ্যাস। আয়োজন করা হয় বড় বড় কোরঅান মাহফিলের। সেখানে শুধু কোরআন তেলাওয়াত হয়। আর যারা কোরআন পড়তে জানেন না, তারা এ মাসে কোরঅান পড়া শিখে নেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের এ মাসে কোরআন শেখানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ইরানি শিয়া আলেমদের ফতোয়া অনুসারে বালাদে কবিরা বা বৃহৎ শহর তথা মেগাসিটিতে সতের কিলোমিটারের অধিক সফর করলেই মুসাফির হয়ে যেতে হয়। আর মুসাফিরদের রোজা রাখা জাফরি ফেকাহতে নিষিদ্ধ। এ জন্য মসজিদগুলোতে রমজান মাসে ইতেকাফকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তারা দিনের বেলায় অফিস করেন এবং রাতের বেলায় মসজিদে অবস্থান করেন। প্রত্যেক মসজিদেই ইফতার, খানাপিনা ও সাহরির আয়োজন থাকে।
 
ইরানিরা ইফতারের সময় শুরুতে আমাদের মতো ঠাণ্ডা শরবত ও পানীয় গ্রহণ না করে গরম চা ও সুস্বাদু খিঁচুড়ি খেতে পছন্দ করে। তা আসলেই রমজানের দহনে উত্তপ্ত উত্তেজিত জঠর ও পেটের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়া ইফতারের সময় ইরানিরা খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয়-শরবত নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের আপ্যায়ন করে আনন্দ পান।

এ মাসে শহরের বিভিন্ন হোটেল রোস্তোরাঁয় রুটি, ডিম, পনির, চা, কোফতা (মাংস, চাল আর গুল্মের বড়া) আর কুকু (ডিম, সবজি আর মসলার মিশেল এক ধরনের ওমলেট) তৈরি করা হয় রোজাদারদের জন্য। ডিনারে প্রায়ই একই ধরনের খাবার থাকে। ইরানিরা পানি, খেজুর, রুটি, মধু, চা, পনির আর হালুয়া (গোলাপজলের সৌরভওয়ালা ক্যান্ডি) দিয়ে রোজা ভেঙে থাকে। এছাড়াও তারা ইফতারের সময় শুরুতে আমাদের মতো ঠান্ডা শরবত ও পানীয় গ্রহণ না করে গরম চা ও সুস্বাদু খিঁচুড়ি খেতে পছন্দ করে। এরপর রাতের খাবার।

ইরানে ঈদ উদযাপন হয় অনেকটা নিরবে। অনুষ্ঠানের ঘটা থাকে ব্যক্তিগত সব আয়োজনে। ঈদে দান করাটা তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রতিটি মুসলিম পরিবার গরিবদের মধ্যে খাবার বিলিয়ে থাকে। এমনকি ধনী অনেকে এই দিনে ত্যাগের মহিমায় গরু বা ভেড়ার মাংস গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে থাকে। যদিও ঈদুল আজহায় এ নিয়ম প্রচলিত, কিন্তু ইরানিরা অনেকে ঈদুল ফিতরে গরিবদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘন্টা, জুন ২১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।