ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য প্রশিক্ষণের মাস রমজান: মাওলানা সালেহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য প্রশিক্ষণের মাস রমজান: মাওলানা সালেহ ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: খুলনা বিভাগের বরেণ্য আলেম আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ।

খুলনা টাউন জামে মসজিদের খতিব এবং খুলনার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ সার্কিট হাউজ মাঠের ইমাম ও খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি। ৭১ বছর বয়সী এ আলেমে দ্বীন ১৯৪৫ সালে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বাংলানিউজের সঙ্গে শৈশবের রোজার স্মৃতিচারণ করেছেন। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহবুবুর রহমান মুন্না। দীর্ঘ আলোচনায় উঠে এসেছে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি রমজানে করণীয় বিষয়ে দিক-নির্দেশনা। আলাপের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকের জন্য-

৭ বছর বয়সে রোজা রাখা শুরু
বাবা মাওলানা এ এইচ এম হাতেম আলী ছিলেন আলেম। নানা ছিলেন আমতলীর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর হজরত মাওলানা আবদুল লতীফ। তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসার ডিগ্রীধারী একজন উ‍ঁচুমানের আলেম এবং  ফুরফুরার মরহুম পীর আবু বকর সিদ্দিকীর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। যে কারণে পারিবারিকভাবেই সবাই ছিলেন নামাজি ও রোজাদার। যাদের দেখে আমি নিজেও নামাজ-রোজার প্রতি আগ্রহী হই। যতদূর মনে পরে ৬/৭ বছর বয়স থেকে রোজা রাখা শুরু করি। এখন বয়স বেড়েছে। শরীর সবসময় ভালো থাকে না। তবে রমজান এলে অন্যরকম শক্তি অনুভব করি নিজের ভেতর। রোজাতে তেমন কোনো কষ্ট অনুভব হয় না। জীবনের প্রথম যে রোজাটি রেখেছিলাম, তখন তো রোজা রাখার আনন্দ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন রোজার রাখি প্রকৃত স্বাদ অনুভব করে।

রমজানের চাঁদ দেখার জন্য ব্যাকুল থাকতাম
আকাশে রমজানের এক ফাঁলি চাঁদ দেখার জন্য সবাই ব্যাকুল থাকতাম। আমাদের শৈশবে নতুন চাঁদ দেখার আনন্দই ছিল আলাদা। কিন্তু এখন আর দলবেঁধে চাঁদ দেখার প্রচলনই নেই। বেতার-টেলিভিশন ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় রোজার আগমনী বার্তা। অথচ আমাদের শৈশবে এসব কিছু ছিলো না। সেহেরির সময় জোরে শব্দ করে ডেকে অথবা রোজাদাররা নিজেরাই ঘুম থেকে উঠতেন।

 
ইফতারিতে পছন্দের ছিলো মলিদা
মা খালার হাতের সুস্বাদু ও লোভনীয় সব খাবার দিয়েই শৈশবে ইফতার করতাম। তবে ইফতারে সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিলো মলিদা। চালের গুঁড়া, নারকেল, গুড় মিশিয়ে শরবতের মতো তৈরি মলিদা রোজাদারদের ক্লান্তি দূর করে দিতো নিমেশেই। এখন হালিম, ফালুদাসহ আধুনিক কোনো খাবারেই সেই স্বাদ আর খুঁজে পাই না।

ইফতার পার্টি ছিলো না
এখনকার মতো আমাদের সময় ইফতার পার্টি ছিলো না। ছিলো ইফতার মাহফিল। যেখানে ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে দোয়া-দরূদ পড়া হতো। কিন্তু এখন ইফতার পার্টি করে সেখানে যারা উপস্থিত হচ্ছেন তাদের নাম পদবি ঘোষণা করে দোয়ার সময় নষ্ট করা হচ্ছে। করা হচ্ছে নানা সমালোচনা। অথচ রমজান মাস সংযমের মাস। গোনাহমুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার মাস। তাই এ মাসে গুনাহ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি।

ঈদের চাঁদ দেখার উল্লাস
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের এক ফালি উদিত চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদের আগমনী বার্তা। এ দিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্যময়তা দ্বারা পরিপূর্ণ। শাওয়ালের চাঁদটি দেখামাত্রই শৈশবে আমরা উল্লাসে মেতে উঠতাম। পাড়া-মহল্লায় পরে যেতো আনন্দের ধুম। এখনকার শিশুদের মাঝে চাঁদ দেখা নিয়ে সেই হৈ-হুল্লোড় লক্ষ্য করা যায় না।

হারানো দিনগুলোকে খুব অনুভব করি
ঈদের আনন্দের ক্ষেত্রে ছোটবেলায় দেখা যেত প্রতিবেশি সবার বাসায় যাওয়া হতো। আর সব বাচ্চারা মিলে মাঠে ছুটে বেড়ানো, খেলাধুলা করা, ইচ্ছেমতো হৈ-হুল্লোড় করা এগুলোই ছিল ঈদের মজা। জীবন পথের এ সময়ে হারানো দিনগুলোকে খুব অনুভব করি।

আহবান
সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, ইসলামের যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, সাম্যবাদিতা ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি দ্বারা বিকশিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখতে রোজার এক মাসের ন্যায় বাকি ১১ মাস চলার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ সময়:  ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এমআরএম/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।