ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

মিথ্যা পরিত্যাগ না করলে রোজা কবুল হয় না: আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
মিথ্যা পরিত্যাগ না করলে রোজা কবুল হয় না: আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চলছে রমজান মাস। আজ রহমতের প্রথম দশকের শেষদিন।

রমজান মাসের আমল, ইবাদত-বন্দেগি, করণীয় সম্পর্কে বাংলানিউজের ধারাবাহিক আয়োজন সাক্ষাতকারে মুখোমুখি হয়েছিলেন গোপালগঞ্জ গওহরডাঙ্গা মাদরাসা মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহল আমীন। মুফতি রুহুল আমীন নিয়মিত সহিহ বোখারির দরস প্রদান ও ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মানুষকে আলোর পথে আহবান করে যাচ্ছেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক আল আশরাফ। তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের ইসলাম বিভাগের প্রধান মুফতি এনায়েতুল্লাহ। সেই আলাপচারিতার অংশবিশেষ পাঠকের জন্য-

রমজান মাসের সম্মান বেশি
হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও এহেতেসাবের (আত্ম পর্যালোচনা) সঙ্গে রোজা রাখবে তার অতীতের গুনাহ-অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ নিঃসৃত বাণীসমূহ যেকোনো ইমানদারকে আনন্দে উদ্বেলিত না করে পারে না। তাইতো অন্য মাসের তুলনায় এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। সুতরাং এ মাসের কদর করতে হবে। দেখুন, হাদিসে বলা হয়েছে, ‘এ মাসে যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপন ইচ্ছায় কোনো নফল নেকির আমল করে, সে অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাবে। আর যে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্যান্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান সওয়াবের হকদার হবে। ’ এমন ঘোষণাকে আরও মহিমান্বিত করেছে আরেকটি ঘোষণা। সেটি হলো, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা নির্দিষ্ট করে আমার জন্য রাখা হয়। আর আমিই এর প্রতিদান দেব। ’

রমজানের বিশেষ আমল কোরআন তেলাওয়াত
মাহে রমজানের ফজিলত, রোজার সত্যিকার পুরস্কার লাভ ও রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত পেতে হলে সবাইকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে কিছু কাজ করতে হবে। যে কোরআনের কারণে রমজানের এত মর্যাদা, আমাদেরকে সর্বপ্রথম সেই কোরআনের দিকে মনোসংযোগ করতে হবে। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। তাই কোরআন তেলাওয়াতে যত্নবান হতে হবে।

রোজার হক পূরণ করতে হবে
যথাযথ হকের সঙ্গে রোজা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। রোজা রেখে অশ্লীল কাজে বা বাজে কথায় নিজেকে নিয়োজিত করা যাবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করে না তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নাই। ’ বাজে কথা ও অসার কাজ পরিত্যাগ করা মুমিনদের একটি সার্বক্ষণিক গুণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা (ঈমানদাররা) বেহুদা কথা ও কাজ হতে দূরে থাকে। ’ -সূরা আল মুমিনুন: ০৩

আত্ম পর্যালোচনা করতে হবে
আত্ম পর্যালোচনা করতে হবে। জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে ভাবুন। অন্যায় কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হোন; তওবা করুন। এ রমজানে জীবনের বাকি দিনগুলো ভালো হয়ে চলার মজবুত সিদ্ধান্ত নিন। এমনিভাবে রোজার দিনগুলো নিয়ে ভাবুন। রোজার হক যথাযথভাবে আদায় হলো কিনা, অবচেতন মনে কোনো অন্যায় হয়ে গেল কিনা পর্যলোচনা করুন। এ আত্মপর্যালোচনা সম্বলিত রোজা আমাকে-আপনাকে আল্লাহতায়ালার মাগফিরাতের উপযুক্ত করবে। সকালে বা সন্ধ্যায় বা রাতের শেষভাগে আমরা এ আত্মপর্যালোচনা (এহতেসাব) করতে পারি। এই এহতেসাব আত্মশুদ্ধিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

নফল ইবাদত বেশি বেশি করুন
নফল নামাজ, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ইস্তেগফার বেশি বেশি করে পড়তে হবে। এ মাসে একটি নফল আদায়ে অন্য মাসের একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এ মাসে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় খুব সহজ, কারণ ওই সময় আমাদের সেহেরি খেতে উঠতেই হয়। তখন একটু আগে-ভাগে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নিতে পারেন।

মানুষকে ইফতার করানোর চেষ্টা করতে হবে
অধিকসংখ্যক লোকেকে ইফতারি করানোর চেষ্টা করতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি  কোনো রোজাদারকে ইফতারি করাবে তার এ কাজ তার গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাবার কারণ হবে। এ রোজাদারের রোজা রাখার যত সওয়াব হবে তাতে (যে ইফতারি করাবে) তারও ঠিক ততখানি সওয়াব হবে। কিন্তু  তাতে (ইফতারকৃত) রোজাদারের সওয়াব একটুও কম হবে না। ’

তারাবি ছাড়া যাবে না
যথারীতি তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। দিনের রোজা ও রাতের নামাজের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় ও অধিক বস্তুগত ব্যস্ততা থেকে রমজানে নিজেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখতে হবে। এ দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

সম্ভব হলে ইতেকাফ করুন
সম্ভব হলে ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে। হাদিসে ইতেকাফের বিশেষ ফজিলতের কথা বলা হয়েছে।   নিজে না পারলে মহল্লায় অন্তত একজনকে ইতেকাফে বসতে সাহায্য করতে হবে। একজন বসলে মহল্লার সবাই সুন্নতের জিম্মাদারি থেকে মুক্তি পাবেন। যিনি ইতিকাফে বসবেন তার প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পরিবারেও রোজার অনুশীলন করুন
এ পবিত্র রমজানে আমাদের পরিবারকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ এবং তোমাদের পরিবার-অধঃস্থনদের বাঁচাও। ’ কোরআনের এ দাবি শুধুমাত্র রমজানের জন্য নয় বরং গোটা জীবনের জন্য। অবশ্য রমজানে পরিবারের সবাই দ্বীনের কথা শুনতে প্রস্তুত থাকে। তাই আমরা প্রতিদিন একবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতারির পূর্বে বা অন্য কোনো সুবিধাজনক সময়ে ইসলামের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। পরিবারের সবাই সম্মিলিতভাবে দোয়া করতে পারি।

রোজার সম্মান বজায় রাখুন
দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পানাহার বর্জন করুন এবং যারা এ কাজ করে, তাদের সামনে রোজার বিষয়টি তুলে ধরুন। তাদের সচেতন হতে পরামর্শ দিন। চলাফেরায় শালীনতা বজায় রাখুন, অবৈধ আয়-উপার্জন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, মন থেকে রোজাকে উপলব্ধি করুন। এই উপলব্ধির নামই কিন্তু তাকওয়া।

রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্থাৎ খোদাভীতি অর্জন। এটা এমন একটা ভয় যা মানুষকে খারাপ কাজ হতে ফিরিয়ে রাখে। একজন রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রোজা পালন করে, আল্লাহর ভয়ে গোপনেও কিছু খায় না, সৎ কাজে এগিয়ে যায়, রোজার সওয়াব নষ্ট হয় এমন অনেক জিনিস পরিহার করে- এভাবে সিয়াম সাধনা (রোজা) আল্লাহর হুকুম মানতে মানুষকে অভ্যস্থ করে এবং মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে জাগিয়ে তোলে।

যে রোজা মানুষকে ভালো হতে উৎসাহিত করে না, যে রোজার মাধ্যমে মানুষ খারাপ কাজ পরিহার করতে শেখে না- সে রোজা যথার্থ রোজা নয়। হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত হলো না, তার ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকায় আল্লাহর কোনো‌ প্রয়োজন নেই। ’

বর্ণিত হাদিসের আলোকে আমাকে-আপনাকে ভাবতে হবে, নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আমাদের রোজাগুলো কী তার হক অনুযায়ী হচ্ছে, না শুধু আমরা উপবাস থাকছি?

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad