ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ইফতারের উসিলায় জাহান্নামিদের মুক্তি: আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
ইফতারের উসিলায় জাহান্নামিদের মুক্তি: আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ছবি: অনিক খান - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চৌধুরীপাড়া, ঢাকা থেকে ফিরে: ‘আমাদের বাড়ির সবাই রোজা রাখতো। আমিও ছোট থেকেই রোজা রাখতাম।

এতো ছোট বয়সে রোজা রাখতে শুরু করেছি যে সময়টা মনে নেই। সেই সময় আমাদের গ্রামের বাড়ির সঙ্গে মসজিদ ছিল। মসজিদে সব গ্রামবাসীর সঙ্গে একসঙ্গে ইফতারি করতাম আমরা। এমনই রেওয়াজ ছিল। ’

স্মৃতিকাতর হয়ে কথাগুলো বলেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ঈমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। রোববার (১৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়া ঝিল মসজিদ সংলগ্ন ইকরা বাংলাদেশ ইসলামি গবেষণা পরিষদ কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে রমজানের শৈশব স্মৃতি কথা তুলে ধরেন এভাবেই।

গ্রামীণ জীবনের অনেক বছর আগের রেওয়াজ আজো ধরে রেখেছেন এ প্রখ্যাত আলেম। নিজের মুখেই বলেন, ‘গ্রামীণ জীবনের সেই রেওয়াজ এখনো ধরে রেখেছি। এখনো আমি আমার মহল্লার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে ইফতার করি। ’

এখনকার সময়ের মতো সাধারণ মানুষের পাতে আধুনিক ইফতারির আইটেম থাকতো না। ওই সময় ইফতারির আগে চাউল ভাজা হতো। নস্টালজিক হয়ে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘চাউল ভাজা আর ফিতা রুটির সঙ্গে ডিম ভাজা আমার খুব প্রিয় ইফতারি ছিল। সম্ভবত তখন আমার বয়স ছিল ৫ কী ৬। সেই সময় মুড়ির প্রচলন থাকলেও বুট ভাজার প্রচলন ছিল না। শৈশবের ইফতারির অনুভূতি মনে না থাকলেও খুব মজা করেই ইফতারি করতাম এটুকু বলতে পারি। ’

বাবা-মা’র আদুরে সন্তান হলেও অভিভাবকের কাছে কোনো রকম আবদার করতেন না তিনি। এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে আবদার করতে অভ্যস্ত ছিলাম না। ওনারা যাই দিতেন সন্তুষ্ট থাকতাম। ঈদের সময়েও তাদের কাছে জামা-কাপড় চাইতাম না। ’

প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন হাদিসের এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যাদের ওপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল তাদেরও দয়াময় আল্লাহ ইফতারের উসিলা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই সাধারণত সব মুসল্লিদের নিয়ে আমি এ দোয়া বেশি বেশি করে পড়ি- ‘ইয়া ওয়াসিয়াল ফাজলি ইগ ফিরলি। ’

এ দোয়ার অর্থ, ‘হে বিপুল অনুগ্রহের অধিকারী! আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত কানে আজানের শব্দ না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ দোয়া পড়তে থাকি। ’

বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, রমজানে ফরজ, ওয়াজিব আদায়ের পাশাপাশি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনে কারিম অন্য সময়ের চেয়ে বেশি তেলাওয়াত করতেন। আর দান-খয়রাত বেশি বেশি করে করতেন। দান-খয়রাতে রোজার সময় আল্লাহ ৭০ গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেন।

শৈশবে ঈদের আগের রাতের আনন্দ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবারও নিজেকে স্মৃতির ভেলায় ভাসিয়ে দেন শোলাকিয়ার ইমাম। বলেন, ‘চাঁন রাতের প্রচলন কখনও গ্রামে দেখেনি। শহর ও ঢাকায় এসে এ রাতের প্রচলন দেখেছি। আমাদের সময় গ্রামে ঈদের আনন্দ ছিল। ঈদের আগের রাতে ওই রাতে মা রকমারি পিঠা তৈরি করতেন। নিজ হাতে সেমাই তৈরি করতেন। ’

বলতে থাকেন, ‘যারা ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারতো না তারা বালিশের নিচে পুরাতন কাপড় রেখে দিতেন। যাতে কাপড় ইস্ত্রি’র মতো হয়ে যায়। কারণ ওই সময় তো গ্রামে ইস্ত্রি ছিল না। ’

রমজানে কোরআনে কারিম বেশি বেশি করে তেলাওয়াতের পাশাপাশি কালেমা তাইয়েবা, আস্তাগফিরুল্লাহ, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের দোয়া ও বেহেশত লাভের দোয়া বেশি বেশি করে পড়ারও পরামর্শ দেন আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমএএএম/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।