ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

রোজা অবস্থায় বিমানে উড্ডয়ন ও ভ্রমণসংক্রান্ত মাসয়ালা

কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
রোজা অবস্থায় বিমানে উড্ডয়ন ও ভ্রমণসংক্রান্ত মাসয়ালা

বিমানে ভ্রমণকারীর করণীয়
বিমানে ভ্রমণরত অবস্থায় সূর্যাস্ত ও ফজরের ওয়াক্তের সূচনা বিমান থেকে দেখে নির্ণয় করতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিমান যে দেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে, সেই দেশের সময়সূচীর অনুসরণ করা যাবে না। কেননা শরিয়তে রোজার শুরুকে ফজরের শুরু এবং রোজার সমাপ্তিকে সূর্যাস্তের (অর্থাৎ সূর্যগোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হওয়ার) সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, আর তা হবে প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থান অনুযায়ী।


কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে সাধ্যমতো আন্দাজ করে রোজার শুরু ও শেষ করবে। কেননা এক্ষেত্রে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ‍

মাসয়ালা: বিমানে ভ্রমণকারী ভূমিতে থাকা অবস্থায় সূর্যাস্তের সময় অনুযায়ী ইফতার করল, এরপর বিমান আকাশে ওড়ার পর সূর্য দেখা গেল, এক্ষেত্রে তাকে পানাহার থেকে বিরত হতে হবে না, কেননা তার রোজা শরিয়তসম্মতভাবে পূর্ণ হয়েছে। -শরহে উমদাতুল ফিকহ: ৫৬৪

মাসয়ালা: তেমনই নিজ দেশে ইফতার করার পর ওই দিন থাকতেই কেউ যদি অন্য দেশে পৌঁছে যায় এবং সেই দেশে দিবাভাগ বিরাজ করে, তবে পানাহার থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন নেই এবং রোজা পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে। -প্রাগুক্ত

কিন্তু যদি সূর্যাস্তের পূর্বেই প্লেন আকাশে ওড়ে আর এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় তবে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত রোজা পালন করে যেতে হবে।

এ সব মাসয়ালার সপক্ষে দলিল হলো, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রাত এখান (পূর্বদিক) থেকে আগমন করে ও দিন এখান (পশ্চিমদিক) থেকে পশ্চাত গমন করে এবং সূর্যাস্ত যায়, তাহলে সওম পালনকারী ইফতার হল। ’- সহিহ বোখারি ও মুসলিম
 
রোজা অবস্থায় ভিন্ন দেশে গমনের ফলে সময়ের তারতম্য হলে
মাসয়ালা: একস্থানে রোজা শুরু করে অন্যস্থানে যাওয়ায় রোজা কম-বেশি হলে ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক্তি জাপানে রোজা শুরু করল সেদেশে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এবং ১৫ রমজান সে সৌদি গিয়ে দেখল ওই দিন ১৭/১৮ রমজান। লোকটি যেদিন সৌদিবাসীর সঙ্গে ঈদ করল তার আগের দিন পর্যন্ত রোজা হয়েছে ২৭ বা ২৮টি। এখন তার করণীয় কী? এমনিভাবে উদাহরণস্বরূপ, সাউথ আফ্রিকায় রোজা শুরু করে কেউ ইন্দোনেশিয়া চলে গেলে তার রোজা ৩০টি পুরো হওয়ার পরও ইন্দোনেশিয়াবাসীদের সে হয়তো আরো ২টি বা ১টি রোজা রাখতে দেখতে পারে। এক্ষেত্রে লোকটি কত দিন রোজা রাখবে? অর্থাৎ এক দেশে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা শুরু করে অন্য দেশে গিয়ে তা সমাপ্ত করলে ওই দেশের চাঁদের হিসাবে রোজার সংখ্যা কমে বা বেড়ে গেলে তখন ওই রোজাদার ব্যক্তির করণীয় কী?

এ প্রশ্নের জবাবের আগে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, চান্দ্রমাসের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়কাল হলো যথাক্রমে ২৯ ও ৩০ দিন। হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) সুস্পষ্টভাবে এ ঘোষণা দিয়েছেন। এরই আলোকে সমস্যাটির সমাধান হলো- যে ব্যক্তি ২৭ বা ২৮ রোজা পূর্ণ করার পরই তার (সফর করে আসা) দেশে ঈদের চাঁদ ওঠে যায় সে ওই দেশবাসীর সঙ্গে ঈদ করবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি বা দু’টি রোজা রেখে ৩০টি পূর্ণ করবে। তবে ওই জায়গায় যদি ২৯ রোজার পরই ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে তাহলে ২৯টি পুরো করলেই চলবে। আর যে ব্যক্তির রোজা ৩০টি পুরো হয়ে যাওয়ার পরও ওই দেশের মুসলমানদের রমজান মাস পূর্ণ হয় না সে ওই দেশের লোকজনের সঙ্গে রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত রোজা রেখে যাবে। যাতে রমযানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন না হয়। অতপর সকলের সঙ্গে একত্রে ঈদ করবে।

আরেকটু বিশদভাবে বললে, কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে উমরা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছে। বাংলাদেশ হিসাবে তার ২৮ রোজা পূর্ণ হতেই সেখানে ঈদের চাঁদ দেখা গেছে। এই ব্যক্তি সৌদি আরবের লোকের সাথেই ঈদ করবে, ওই দিন সে রোজা রাখবে না। পরবর্তীতে সে একটা রোজা কাজা করে নিবে যদি বাংলাদেশে ঊনত্রিশে রোজা হয়ে থাকে আর যদি ত্রিশে রোজা হয়ে থাকে তাহলে দু’টো রোজা কাজা করে নিবে।

অনুরূপ কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসেছে। সৌদি আরবের হিসাবে তার রোজা ৩০টি পূর্ণ হলেও বাংলাদেশে এখনো চাঁদ দেখা যায়নি। সে বাংলাদেশী মানুষের সাথেই ঈদ পালন করবে যদিও তার রোজা ৩১টি হয়। -নাসাঈ শরিফ, হাদিস নং ২১১৮, ফতোয়ায়ে আলমগীরী: ১/১৯৯

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘন্টা, জুন ২৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।