ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

মাস্তুলের মেহমানখানায় লাখো রোজাদারের ইফতার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
মাস্তুলের মেহমানখানায় লাখো রোজাদারের ইফতার

ঢাকা: ‘বয়স হইছে, এহন আর কোনো কাম করতে পারি না। অসুস্থ হইয়া ঘরের ভিত্রেই (ভেতরে) পইরা থায়ি।

পোলার অভাবের সংসারে আমি বুজা হইয়া আচি। এ চাল, ডাল, তেল নিয়া গেলে সবাই খুশি হইবো। আমারত আর সামুর্থু (সামর্থ্য) নাই পোলার সংসারে কিছু দেওনের (দেওয়ার)। ’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্তুলের ফুড প্যাক পেয়ে এভাবেই অভিব্যক্ত করছিলেন এক বৃদ্ধা। এ রমজানে এমন আরও হাজারো মানুষের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে কাজ করছে সংগঠনটি। তাদের মেহমান খানায় পুরো রমজানজুড়ে আয়োজন হচ্ছে লাখো মানুষের ইফতার।

করোনা মহামারি, রোহিঙ্গা সংকট, সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে বন্যাসহ যেকোনো সংকটে দেশের যে কয়টি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্মুখভাগে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে তাদের মধ্যে মাস্তুল ফাউন্ডেশন অন্যতম। বরাবরের মতো এবারও রমজানকে ঘিরে লাখো রোজাদার মানুষের মুখে ইফতার তুলে দেওয়া ও ২০ হাজারের বেশি মানুষের ঘরে চাল, ডাল, ইফতারসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এ সংগঠনটি।

প্রতিবছর রমজানে মাস্তুল ফাউন্ডেশন মাসব্যাপী এ কার্যক্রম করে থাকে। প্রতিবারের মতো এবারও হাজার অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে মাস্তুলের সহায়তা। পুরো রমজান মাসজুড়ে সমাজের দুস্থ-অসহায়, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের দ্বারপ্রান্তে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাবে।

মাস্তুল ফাউন্ডেশন হলো দুস্থ মানবতার সেবার জন্য কল্যাণমূলক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী, বেসরকারি, গবেষণাভিত্তিক একটি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্য দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাস্তল ফাউন্ডেশন। তখন থেকেই মাস্তুল ফাউন্ডেশন ৫০ হাজারেও বেশি মানুষের ইফতার বিতরণ এবং ৪০ হাজারেও বেশি পরিবারকে রমজানের খাদ্য প্যাকেজ বিতরণের ব্যবস্থা করেছে।

মাস্তুল ফাউন্ডেশন প্রতি রমজানে নিয়মিত ইফতার এবং ইফতারের সামগ্রী বিতরণ করে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে। এ বছরের রমজানেও মাস্তুল ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নিয়েছে এক লাখ রোজাদার মানুষের কাছে ইফতার ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার। দুইটি ভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে মাস্তুল ফাউন্ডেশন এ কাজ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ইফতারের জন্য যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্যমত অনুদান দিয়ে অংশ নিতে পারবেন সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। মাত্র ৪০ টাকা অনুদানের মাধ্যমে সমাজের যে কেউ সহায়তা করলে তার এ সহায়তায় একজন গরিব অসহায়ের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে যাবে মাস্তুলের ইফতার। সারা মাসজুড়ে প্রায় এক লাখ রোজাদারকে এ ইফতার দেওয়া হবে।
 
মাস্তুল মেহমান খানা থেকে ইফতার তৈরি হয়ে পৌঁছে যাবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়াও শুভাকাঙ্ক্ষীরা মাস্তুল এতিমখানায় আশ্রয় নেওয়া শতখানেক বাচ্চাদের জন্যও ইফতারের আয়োজন করতে পারবেন এবং এতিমখানায় সশরীরে এসেও বাচ্চাদের সঙ্গে ইফতার করতে পারবেন।

মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এক হাজার টাকার খাদ্যপণ্য পৌঁছে যাবে অন্তত ২০ হাজার পরিবারের কাছে। যেখানে থাকছে চাল, ডাল, ছোলা, তেল, মসলাসহ রমজানজুড়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য। বিভিন্ন এলাকার সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র কিংবা কর্ম অক্ষম পরিবারই এ ত্রাণের আওতায় পড়বে। এ কাজে মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এসেও অনেকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

মাস্তুল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা কাজী রিয়াজ রহমানের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে কাজ করেন মাস্তুল ফাউন্ডেশনের নিবেদিত প্রাণ একদল কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা।

কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, আমি মনে করি আমরা শুধু একটি মাধ্যম এ সুন্দর কাজটার সেতুবন্ধন তৈরির জন্য। আমরা নিজেদের জায়গা থেকে তো বটেই, তার পাশাপাশি সব অনুদানকারী বন্ধুদের দান করা অর্থের দায়িত্ব নিয়ে সমাজের সব গরিব, দুস্থদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। কারণ রমজান জুড়ে প্রায় সবাই দান-সদকা করে থাকেন। আমরা চাই কেউ যেন শুধু অনুদান দিয়েই দায়িত্ব শেষ না মনে করেন, আমাদের সঙ্গে এসে নিজের হাতে ইফতার দেওয়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। আমরাই পারি ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে এ মহিমান্বিত মাসে এসব কাজের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের হক পূরণ করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে।

যাকাতের মাধ্যমে স্বাবলম্বী:
মাস্তুল ফাউন্ডেশন এ রমজানেও উদ্যোগ নিয়েছে যাকাত প্রকল্পের আওতায় হাজারো অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার। যাকাতের অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া হয় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের নাম্বারে। সেই অর্থ আমরা সারা মাস সংগ্রহ করে, পরে সারা বছর জুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় ও দুস্থ মানুষদের চিহ্নিত করি, তাদের সংগ্রহকৃত যাকাতের অর্থে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করা হয়। ইতোমধ্যে মাস্তুল ফাউন্ডেশন প্রায় হাজারেরও অধিক ব্যক্তি ও পরিবারকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করেছে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে ‘স্বাবলম্বী প্রকল্প’ অন্যতম।

সারা বছরজুড়ে এ সংস্থা আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সেবা এবং কাফন-দাফন প্রজেক্ট অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে চাইন্ড স্পন্সরশিপ, এতিমখানা, মাস্তুল স্কুল, পথশিশুদের নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচি। অসহায় ও গরিবদের জন্য ফ্রি অক্সিজেন ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার প্রয়োজনে যোগাযোগের নম্বর- ০১৭৩০৪৮২২৭৯।

এসব প্রজেক্টের সঙ্গে চাইলেই সমাজের যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যুক্ত হতে পারেন যে কোনো সময়ে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কল করতে পারেন ০১৭৩০৪৮২২৮০ এই নাম্বারে অথবা সরাসরি যোগাযোগ করুন মাস্তুল ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে। বিকাশ ও নগদে অনুদান পাঠাতে পারেন ০১৭৩০৪৮২২৭৭ এ নাম্বারে। বা সরাসরি বিকাশ বা নগদ অ্যাপের ডোনেশন অপশন থেকেও অনুদান পাঠাতে পারবেন।

অথবা দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে অনলাইনে অনুদান দিতে  https://www.mastul.net/donate/ মাস্তুল ফাউন্ডশনের স্বপ্ন এক দিন নিজেদের একটা স্থায়ী জায়গা হবে, যেখানে বিনামূল্যে শরিয়ত মোতাবেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শেষকার্য সম্পাদন করা হবে। যার মডেল ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এবং অনুদান যোগানের কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।