ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দ্বীপ পাহাড় কাট্টলী বিল

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
দ্বীপ পাহাড় কাট্টলী বিল দ্বীপ কাট্টলী বিল, ছবি: বাংলানিউজ

লংগদু (রাঙামাটি) থেকে ফিরে: রাঙামাটির কাপ্তাই লেক কে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম লেক। আর এ লেকের বৃহত্তম বিল হলো ‘কাট্টলী বিল’। রাঙামাটির লংগদুতে যার অবস্থান। খাগড়াছড়িতে থেকে পানি পথে পাক্কা দেড় ঘণ্টার পথ।

গন্তব্য দ্বীপ কাট্টলী বিল। কাপ্তাই লেকের পানি পথ ধরে ছুটছে আমাদের বহনকারী ইঞ্জিন চালিত বোর্ট।

বাতাসের ছন্দ পেয়ে পানির ঢেউয়ে দুলছে সেটি। দুলছে লেকের পানিতে নেমে আসা রোদ্র্রচ্ছল। পথ যেতে যেতে চোখে পড়বে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
বিভিন্ন ধরনের মাছের শুঁটকি, ছবি: বাংলানিউজচারপাশে পানি আর মাঝখানে একটি দ্বীপ ঘিরেই কাট্টলী বিল। যে দ্বীপের প্রায় মানুষ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। লেকের মাছ ধরেই চলে তাদের জীবিকা। চাপিলা, চিতল, কৈ, রুই, টাকি, বাঘা আইড়, শোলসহ নানা রকম মাছ আর কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি দু’টোই পাওয়া যাবে এখানে। তবে ১ মে থেকে শুরু করে আগামী তিন মাস কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এ সময়টাতে যারা যাবেন তারা টাটকা মাছের স্বাদ নাও পেতে পারেন।
 
লেকের বুকে কোনো কোনো নৌকা থেকে ফেলা হয়েছে জাল। আবার কোনো নৌকায় টেনে তোলা হচ্ছে জালভর্তি মাছ। ১৭ হাজার বর্গ ফুট আয়তনের কাট্টলী বিলে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে বাঁধ দেওয়ার কারণে জন্ম হয় এ কাট্টলী বিলের। বিলের মাছ ঘিরে গড়ে উঠেছে শুঁটকি খোলা।
কাট্টলী বিলে মাছ ধরছেন জেলেরা, ছবি: বাংলানিউজরাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের বিশাল জলরাশির বুকে কাট্টলীকে একখণ্ড দ্বীপই মনে হবে। রাঙামাটি শহর থেকে লংগদু অথবা বাঘাইছড়ি উপজেলায় নৌপথে যাওয়ার সময় এ দ্বীপের দেখা মেলে। প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত কাট্টলী বিলের মধ্যে এ দ্বীপের চারপাশের নীল রংয়ের স্বচ্ছ জল আপনাকে বিমোহিত করবে। আর শীতের মৌসুম অতিথি পাখির ঝাঁক বেধে উড়াউড়ি আপনাকে দেবে বাড়তি আনন্দ। দ্বীপে দাঁড়িয়ে চারিদিকে দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার নানান দৃশ্য। ইচ্ছা করলে নৌকায় চড়ে ঘুরে দেখতে পারেন হ্রদের সৌন্দর্য।
 
এ দ্বীপকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জীবনযাপনের এক অন্যরকম গল্প। ঘর-সংসার ব্যবসা-বাণিজ্য সবই যেন বহমান এখানে। সপ্তাহে একদিন এখানেই পসরা সাজিয়ে বসে উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। জুমের ফসল নিয়ে আসে পাহাড়ি কৃষাণ-কৃষাণীরা। চলে দিনভর বিকিকিনি।
 কাট্টলী বিলের তীর নৌকা, ছবি: বাংলানিউজএ দ্বীপের প্রধান কারবার শুঁটকি তৈরি। কাপ্তাই হ্রদের ছোট বড় নানা প্রজাতির মাছের শুটকি এখানে তৈরি করে চলে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারী বাজারে। এখানকার মিঠা পানির সুস্বাদু শুটকির বেশ সুনাম সারা দেশে। চাইলে সরাসরি এখান থেকেও কিনতে পারেন যে কোনো শুঁটকি। লেকের বুকে শীতে দেখা মিলবে পানকৌড়ি, শামুকখোলসহ নানা প্রজাতির পাখি।
 
দেশের নানা প্রান্ত থেকে যেসব পর্যটক কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে আসেন তারা কিন্তু কাট্টলী দ্বীপ ঘুরে যেতে পারেন অতি সহজেই । রাঙামাটি শহর থেকে রিজার্ভ বোট অথবা এ রুটে চলাচলকারী লঞ্চে উঠে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন কাট্টলী দ্বীপে। কিংবা প্রথমে খাগড়াছড়ি হয়ে লংগদু উপজেলা আসতে পারেন। লংগদু থেকে নদী পথে দেড় ঘণ্টা। সেখান থেকে এরপর ছোট্ট দ্বীপটি ঘুরে দেখতে বেশি সময়ের দরকার হবে না। ইচ্ছা করলে দুপুরের খাবারটা এখানেই সেরে নিতে পারবেন। এখানকার তাজা মাছের স্বাদ অন্যরকম তৃপ্তি দেবে আপনাকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
এডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।