ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ভ্রমণে নারীর সঙ্গী নারী!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
ভ্রমণে নারীর সঙ্গী নারী! ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ- এর সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্নাস ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসসুম। ছোট বেলা থেকেই ঘুরে বেড়ানোর শখ। পরিবার থেকে ভ্রমণে তেমন বাধাও নেই। তাই কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পেলে, তার হাত দু’টো হয় পাখির ডানা। তবে যত বড় হচ্ছে, ততই পায়ে বেড়ি পড়ছে তানিয়ার। কারণ কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে নারী সঙ্গীর অভাবে শুরু হয় পরিবারের আপত্তি।

তাই ঘুরে বেড়ানোর শখ ‘তোলাই’ থাকতো তানিয়ার। তখনই ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে চোখে পরে ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’ পেজের।

যার কল্যাণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন  দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন তানিয়া।  

ভ্রমণে ইচ্ছুক নারীদের নিয়ে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু ফেসবুক গ্রুপ ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-এর। যেসব নারী ভ্রমণ করতে চান প্রথমে তাদের একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্য ছিলো গ্রুপের প্রতিষ্ঠ‍াতা সভাপতি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাকিয়া হকের। আর শুরুর পর এক বছর না পেরুতেই এরইমধ্যে বিভিন্ন ইভেন্টে ১৭টি ট্যুর করেছেন তারা।
 
ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ সংগঠনটি কর্ণফুলী অটোমোবাইলসের স্পন্সরে ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’- টাইটেল নিয়ে স্কুটিতে করে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ঘোরার পরিকল্পনা করেছে। এরইমধ্যে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে কুমিল্লা জেলা ভ্রমণ দিয়ে, ঘোরা হয়েছে ১৪টি জেলা। আগামী ১৭ নভেম্বর আশুলিয়ার ফ্যান্টসি কিংডম থেকে জড়ো হয়ে ১৮ নভেম্বর থেকে আরও ৮টি জেলা ঘোরা বের হবে। সংগঠনের সভাপতি সাকিয়া হক ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা মেডিকেল কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মানসী সাহাসহ এ দলে থাকবেন চারজন।
 
ট্র্যাভেলেটস বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো প্রামাণ্যচিত্র আকারে তৈরির চেষ্টা করে। ট্র্যাভেলসের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
 
সাকিয় হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিমাসে বিভিন্ন ট্যুর প্ল্যান করে থাকি। দেশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করি। সেখানকার স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া হয়। এটা পর্যটনের অন্যতম অংশ। আমাদের একেকটি ট্যুরে ২০-৭০ জন নারী থাকেন। ট্যুরে ১২ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীরাও থাকেন। এতে খুব মজা হয়।

ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ- এর সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত
 
সাকিয়া আরো বলেন, প্রায় প্রতিটি মেয়েরই ভ্রমণের ইচ্ছা থাকে, যা তারা মনের ভেতর রেখে দেন। এর কারণ, নারী সঙ্গী না পাওয়া। এছাড়া নিরাপত্তাও একটি কারণ। তাই ভ্রমণে যেতে পারেন না এমন নারীদের জন্য আমরা ভ্রমণের ব্যবস্থা করি। আর ট্যুরে যাওয়ার আগে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বের হই।  
 
সংগঠনটির ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাকিয়া বলেন, নারীদের ভ্রমণে উৎসাহিত করতে ও নারীর চোখে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে ৬৪টি জেলায় ভ্রমণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় আমরা প্রতিটি জেলায় একটি স্কুলে যাই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাই। এছাড়া মেয়েদের সঙ্গে ভ্রমণের গুরুত্ব এবং ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করি।
 
মেয়েরা স্কুটি চালিয়ে পুরো দেশ ভ্রমণ করছে বিষয়টি ভাবলে রোমাঞ্চকর মনে হবে। বিষয়টিও তাই বলে মানলেন সাকিয়া। তিনি বলেন, পুরো ভ্রমণটা চ্যালেঞ্জে ভরা। স্কুটি নিয়ে গ্রামের পথে পথে যাচ্ছি, মানুষজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখেন। অনেকেই শুনে অবাক হন, স্কুটি চালিয়ে আমরা পুরো দেশ ঘুরবো।
 
সংগঠনটি নিয়ে সাকিয়া ও মানসীদের পরিকল্পনা সূদরপ্রসারী। এ নিয়ে সাকিয়া বলেন, আমরা নিয়মিত ট্যুরের আয়োজন করতে চাই। ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের ফেসবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। এছাড়া ২৭ নভেম্বর প্রথম বর্ষ পূর্তিতে ‘ট্র্যাভেলেটস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হবে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ২ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানে নারী ভ্রমণকারীদের নিয়ে ‘ভ্রমণকন্যা’ নামে একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
এমসি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।