ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগোচ্ছে ‘চা শিল্প’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৮, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগোচ্ছে ‘চা শিল্প’ নারী চা-শ্রমিকের চা পাতা উত্তোলন/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

চা দেশের একটি অন্যতম কৃষিজাত পণ্য। প্রতিদিন চা পান করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

 মুহূর্তে কর্মক্লান্তি দূর করে শরীরে সজীবতা এনে দেওয়া চা অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রাকৃতিক পানীয়।  
দিন দিন তাই চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিক থেকে দেখলে চা সামাজিক বন্ধুত্বের সার্বজনীন এক প্রতীক। যা বন্ধনকে অনায়াসে সুদৃঢ় করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত এই পানীয় খুব সহজেই একজন মানুষকে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়।  


এক সময় আমাদের দেশ থেকে চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। কিন্তু চায়ের দেশের ভেতরকার ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তার সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১০৮ মিলিয়ন কেজি (১০ কোটি ৮০ লাখ)। কিন্তু চায়ের মোট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন কেজি (প্রায় ৯ কোটি ৩ লাখ)। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমেছে প্রায় এক কোটি ৭৭ লাখ কেজি চা।  


এর আগের বছরে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছিল।


বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ) পরিচালক ড. এ.কে.এম. রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি (১০ কেজি ৩০ লাখ)।  


গত বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা গতবারের তুলনায় কিছুটা কমানো হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট ৪৯ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের আগস্টে চায়ের উৎপাদনের ওই পরিসংখ্যান ছিল ৪৯ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন কেজি। আমাদের হাতে আরও ৩ থেকে ৪ মাস অবশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইনশাল্লাহ আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।


চা বাগানের ‘পিকসিজন’র উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং প্রয়োজনীয় সূর্যালোকের উপস্থিতি থাকায় প্রতিটি চা বাগানেই ব্যাপক কুঁড়ি অঙ্কুরিত হয়েছে। যা চা শিল্পের জন্য এক সমৃদ্ধির বার্তা।  চা বাগানের এই সময়টাকেই আমরা পিকসিজন বলে থাকি।


দিকনির্দেশনা বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন বাগানে চা উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেগুলো, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকরণ অর্থাৎ হাত দিয়ে চা পাতা উত্তোলন না করে প্লাকিংমেশিন (চা পাতা উত্তোলনকারী যন্ত্র) ইউজ (ব্যবহার) করা। অনেক চা বাগানেই এখন এই মেশিনটি ব্যবহার করছে। এরপর চা ফ্যাক্টরি আধুনিকায়নের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা আমরা বারবার বলি। এর ফলে চা উৎপাদনের সিওপি (কস্ট অব প্রডাকশন) কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া চায়ের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য আমরা ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্স’ চালু করেছি। এর ফলে চায়ের সাথে জড়িতরা এই কোর্স সম্পন্ন করে চা উৎপাদন এবং বিপণনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।


মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রসঙ্গে পিডিইউ’র এই পরিচালক বলেন, ফার্টিলাইজার (সার) রিকমেন্ডেশন (সুপারিশ) করে দেই আমরা।

মনে করেন, চায়ের জমি গ্রহণ করতে পারবে ৫শ’ কেজি সার, এখন যদি আপনি এক হাজার কেজি সার দেন তাহলে তো লস (ক্ষতি)। তারপর সয়েলের (মাটি) পিএইচ (মাটির অম্লতার পরিমাপ) ৫ দশমিক ৫ থাকলে চা ভালো হয়, এটা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। কিন্তু সয়েলের পিএইট টেস্ট না করে সার দিয়ে চায়ের ব্যাপক ক্ষতি হবে। মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর পিএইচের পরিমাণ কম পেলে আমরা সেই মাটিতে ‘ডলোমাইট’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। পিএইচের পরিমাণ ‘পয়েট ওয়ান’ বাড়ানোর জন্য হেক্টর প্রতি দুইশ কেজি ডলোমাইট প্রয়োজন হয়। তাতে ধীরে ধীরে চা জমির স্বাস্থ্য অনেকটাই সুরক্ষিত হয়ে থাকে।  


চা বাগানের সংখ্যা উল্লেখ করে বর্তমানে দেশে মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৭০টি। অনেকেই এ আপডেট তথ্যটি জানেন না। আর এখানে কর্মরত স্থায়ী চা-শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ১০ হাজার এবং অস্থায়ী চা-শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। চা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও অন্যান্য কাজে আরও পাঁচ লাখ শ্রমিক পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন বলে জানান ড. রফিকুল হক।

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।