কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী ও পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় পর্যটন বান্ধব মৌলিক সুবিধাদি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ৯০ লাখ (নব্বই লাখ) টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এর মধ্যে ২১ লাখ টাকার কাজের কোনো হদিস মিলছে না।
প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ওয়াস ব্লক, ওয়াটার রিজার্ভার, গভীর নলকূপ, পাম্প মোটর কাজ অন্তর্ভূক্ত থাকলেও সেগুলো বাদ দিয়ে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। শুধু আরসিসি রোড, সাইট ডেভেলপমেন্ট, ছাতাসহ বেঞ্চ নির্মাণ কাজ করেই পুরো বরাদ্দ গায়েব করা হয়েছে। প্রকল্পের খাতওয়ারি অঙ্গের ব্যয়ের সঙ্গে বরাদ্দকৃত টাকার হিসাবে দেখা দিয়েছে নানা গড়মিল। এমনকি তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সদুত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন কমিটির প্রধান।
উল্লেখ্য গত ২৬ মে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগের তদন্তে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুকুল কুমার মৈত্রকে প্রধান করে গণপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল, পৌর প্রকৌশল ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় কুঠিবাড়ী চত্বরে তদন্তকালে উপস্থিত হয়ে অভিযোগকারী বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রধানের দেওয়া কাগজে কলমের তথ্যমতে বাস্তবায়িত প্রকল্প ব্যয় ৬৯ লাখ (উনসত্তর লাখ) টাকার হিসাব দিতে পারলেও বাকি টাকার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
শুধুমাত্র শিলাইদহ কুঠিবাড়ী এলাকার উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ লাখ (নব্বই লাখ) টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ২১ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই তদন্ত কমিটির কাছে। এই প্রকল্পে অনিয়ম অভিযোগ তদন্তে ইতোপূর্বে আরও দুইবার তদন্ত করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কুঠিবাড়ী প্রধান ফটক সংলগ্ন চা দোকানি প্রত্যক্ষদর্শী আলামিন বলেন, ‘ওই সময় কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার জন্য ডিসি অফিসের লোকজন তৎকালীন কাস্টোডিয়ানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু উনি সেটা না দেওয়াতে কত কি হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত উনাকে এখান থেকে সরিয়ে দিল’। অথচ ওই কাস্টোডিয়ান চাইলে কোটি টাকা আয় করতে পারতো’।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য গণপূর্ত বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান হোসেন বলেন, ‘এই ফান্ড বরাদ্দ আসে জেলা প্রশাসনের কাছে। উনারাই টেন্ডার করিয়েছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন, দেখে শুনে নিয়েছেন, গণপূর্ত বিভাগ শুধুমাত্র টেকনিক্যাল সাপোর্ট যেটা জেলা প্রশাসন চেয়েছেন গণপূর্ত বিভাগ সেটাই দিয়েছে মাত্র’। এখানে আর্থিক কোনো বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সম্পৃক্ততা ছিল না’।
তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কুমার মৈত্র বলেন, ‘রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মূলত জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। টেন্ডার হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। এখানে ৬৯ লাখ টাকার যে পাঁচটি কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলি ঠিকঠাকভাবে হয়েছে কিনা তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। এর বাইরে যদি আরও কোনো বরাদ্দ হয়ে থাকে সেটার জবাব ডিসি অফিস দেবে। ‘
দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী বলেন, ‘গণশুনানির দিন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। সেই সময় দুদক কমিশনার স্যার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের ওপর তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেই প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরএ