ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

কোন অপরাধে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের?

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২১, আগস্ট ১৯, ২০২৫
কোন অপরাধে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের? আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

তাছিন তালহা (৭) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর দায় এড়াতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উল্টো ওই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ অ্যাখ্যা দিয়ে তার অভিভাবককে গালমন্দ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ওই অভিযোগে আরও ২৪ জন অভিভাবকের স্বাক্ষর রয়েছে।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।  

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম নজরুল ইসলাম। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলির দাবি জানিয়েছেন।  

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তাছিন তালহা প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসে গিয়ে ক্লাস টেস্ট অনুশীলনের অংশ হিসেবে সবাইকে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লিখতে দেন। ছড়া লেখায় তালহা বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন। কিছু লেখা ছোট বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক। এতে তার পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাগ হয়ে যায়।  

এছাড়াও সমাবেশ চলাকালীন লাইন বাঁকা হওয়ায় আবারো তালহাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন প্রধান শিক্ষক। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে এসে ঘটনাটি তার মাকে জানায়। এরপর তার মা স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে বেত্রাঘাতের কারণ জানতে চান। এ সময় গ্রামের বেশকিছু লোকজন সেখানে জড়ো হন। প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে তার মাকে গালিগালাজ করেন। এ ঘটনায় গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। বেত্রাঘাতের দায় এড়াতে প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ বানানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তাদের।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর মা তাসলিমা আকতার বলেন, ওই দিন দুপুরে আমার ছেলে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে আমাকে মারধরের ঘটনাটি বলে। আমি তখন স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আমার ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে চাই। তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, আপনার ছেলে এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আবার আপনার ছেলের হাতের লেখা খারাপ করেছে। প্রধান শিক্ষক আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে আমাকেও গালিগালাজ করেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে? এমন কথা শুনে হতবাক হয়েছি।  
 
স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির বলেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে এটা অবিশ্বাস্য।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী এক মাস আগে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আর সেদিন ক্লাসে হট্টোগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে একটু শাসন করেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরি করতে খরচ হয়। তাই অল্প পরিমাণে টাকা আদায় করি। তবে এটা সবার কাছে নেওয়া হয় না। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ সে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি অবগত হয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।  

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সারাদেশ এর সর্বশেষ