যেখানে প্রকৃতি সুস্বাস্থ্যময়, সেখানেই রঙিন জীববৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। গাছ-গাছালি, পাখি, প্রজাপতি আর নানা কীটপতঙ্গ—সবাই যেন এক মহামিলনের সহযাত্রী।
এই প্রকৃতির এক চিরন্তন সম্পর্ক— ফুল আর প্রজাপতির বন্ধুত্ব। সূর্যোদয়ের প্রথম আলোয় যখন প্রস্ফুটিত হয় কোনো ফুল, তখন তার রেণুতে হালকা ভর করে উড়ে আসে একঝাঁক প্রজাপতি। রঙিন পাখার ভিন্ন ভিন্ন ছোঁয়ায় তারা শুধু সৌন্দর্যই ছড়ায় না, প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ— পরাগায়নেও রাখে নীরব অবদান।
এমনই এক রঙিন ছোঁয়া দেখা গেল শ্রীমঙ্গলের এক চা-বাগান বাঙলোর আঙিনায়। বর্ষার মেঘলা দিনে কমলা রঙের কসমস ফুলগুলো যেন ভোরের রোদ মেখে ফুটে উঠেছে। ফুলগুলোতে বসে বসে রস পান করছে এক ঝাঁক প্রজাপতি, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে চোখে পড়ে ‘ডোরাকাটা অ্যালবাট্রস’।
এই প্রজাপতির ইংরেজি নাম Striped Albatross, যার বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘ডোরাকাটা অ্যালবাট্রস’। মাঝারি আকারের এই প্রজাপতির পুরুষটির ডানা সাদা, চারপাশে কালো রেখা স্পষ্ট। স্ত্রী প্রজাপতির ডানায় গাঢ় ছোপ আর সাদা দাগের পাশাপাশি হলুদাভ ছাপও থাকে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। এরা সাধারণত আর্দ্র ও শুষ্ক উভয় পরিবেশের ঝোপঝাড় এবং খোলা জায়গায় বিচরণ করে।
কমলা কসমস ফুল—যার বৈজ্ঞানিক নাম Garden Cosmos বা Mexican Aster, মেক্সিকোর জন্ম হলেও বাংলাদেশে শীতকালীন ফুল হিসেবে এটি বহুল জনপ্রিয়। সিলেট অঞ্চলের চা-বাগান বাঙলোগুলোয় গোলাপী, বেগুনি ও সাদা রঙের পাশাপাশি কমলা কসমসও ফুটে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে।
শ্রীমঙ্গলের ওই চা-বাগান বাঙলোর আঙিনায় ফুটে থাকা কমলা কসমস ফুলে দেখা মিলল ‘ডোরাকাটা অ্যালবাট্রস’-এর নাচন-কানন। প্রতিটি ফুলে পাঁচ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত তারা থেমে থেকে মুখের সূক্ষ্ম লম্বা নলের মতো অঙ্গটি দিয়ে সংগ্রহ করছিল ফুলের রস। এই সময়েই ঘটে গেল এক মজার ঘটনা—একটি প্রজাপতি যখন মধু পান করছিল, হঠাৎ একই প্রজাতির আরেকটি দুষ্ট প্রজাপতি এসে তাকে গুঁতো দিয়ে তাড়িয়ে দিল! সেই খুনসুটিতে মিশে আছে প্রকৃতির চিরন্তন ছন্দ।
সব মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলের বর্ষা ঋতুতেও কসমস ফুলে প্রজাপতির এই উৎসব চোখে লেগে থাকে। শুধুই সৌন্দর্য নয়, প্রজাপতির উপস্থিতি পরিবেশের ভারসাম্য ও প্রাণবৈচিত্র্যের স্বাস্থ্যের নিদর্শন বহন করে।
বিবিবি/এমজে