রংপুর: সুষ্ঠু নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কার অপরিহার্য বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির এ কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে যা ঘটেছে, সেটিই এখন সারাদেশে ঘটছে।
রংপুরের আইকনিক ব্যক্তিত্ব আবু সাঈদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবু সাঈদের সঙ্গীরা আবার জেগে উঠুক। প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার, জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতা হত্যার বিচার এবং মৌলিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে লড়াই চলবে যতক্ষণ না এসব নিশ্চিত হচ্ছে।
জামায়াত আমির বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও যারা সংখ্যালঘুদের কথা বলে, তারাই তাদের সম্পদ নষ্ট করেছে। আমাদের সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে ১১ জন নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা বেঁচে থাকলে হতাশ জাতিকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারতেন।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিবাদ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যারা আমাদের পাকিস্তানি বলে গালি দিয়েছিল, তারাই আজ ভারতের দিকে পালিয়েছে। আমাদের কোনো নেতাই দেশ ছেড়ে পালায়নি। তারা অপশক্তিকে ভয় করেনি, ফাঁসির মঞ্চেও হাসতে হাসতে গেছেন।
সমাজে বৈষম্যহীনতা গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নয়, সবাই নাগরিক -এটাই হবে পরিচয়। ওরা রাষ্ট্রের মালিক হতে চেয়েছে, আমরা হবো জনগণের সেবক।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সদ্য কারামুক্ত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ফাঁসির মঞ্চ থেকে আজ লক্ষ জনতার মঞ্চে এসেছি। মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে আমাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবু সাঈদের আত্মত্যাগেই আন্দোলন জেগে উঠেছিল, এবং আমি মুক্তি পেয়েছি। আমি চাই, আবু সাঈদের হত্যার দ্রুত বিচার হোক।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রকে এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সব মজলুমের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যারা জুলাইয়ের শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তাদের এখনই আহত ও শহীদদের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্র দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শহীদ আবু সাঈদের প্রজন্ম। অসংখ্য শহীদের রক্ত আমাদের হাতে লেগে আছে। আমরা কাউকে ভয় করি না। সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ার লড়াই চালিয়ে যাব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান।
বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে আয়োজিত এই জনসভা বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জুমার নামাজের পরপরই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপচে পড়া উপস্থিতিতে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে জনসমাগম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কেও। জনসভা থেকে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
** আগে পরিবেশ তৈরি পরে নির্বাচন: জামায়াত আমির
এসআরএস