ভারী বৃষ্টিতে গাইবান্ধার সাঘাটায় ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে টানা একসপ্তাহ ধরে বড় ও মাঝারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন।
বাঁধজুড়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হওয়ার বাঁধের ওপর নির্মিত এলজিইডির পাঁচ কিলোমিটার (সাঘাটা-জুমারবাড়ী) সড়কটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এতে উপজেলার সাঘাটা, ঘুড়িদহ ও জুমারবাড়ি এই তিন ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধীক মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধীক মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন বালু দিয়ে কোনো রকমে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তাতে প্রয়োজনীয় সুফল মিলছে না। ফলে সম্প্রতি শেষ হওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ এলজিইডির সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীররক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ওপর উপজেলার ডাকবাংলা থেকে জুমারবাড়ী বাজারের প্রবেশ পথ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশ এলজিইডি সড়ক নির্মাণ করে। এ সড়কটুকু বগুড়া জেলার সঙ্গে সংযোগ হওয়ায় অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ, এ কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে।
বাঁধটি সংস্কারের সময় বাঁধের মাটি খোড়াখুড়ি, অতিরিক্ত বালু ব্যবহার, বাঁধের একপাশে আইল নির্মাণ ও বাঁধের ওপরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই বাঁধে ধসের সৃষ্টি হচ্ছে।
টানা ভারী বৃষ্টির পানির তোড়ে বাঁধ ও বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কজুড়ে ছোট-বড় ধস ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে টানা সপ্তাহ ধরে এ পথে বড় ও মাঝারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে জনসাধারণ অটোতে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন।
এছাড়াও সংস্কার কাজে অতিরিক্ত বালু ব্যবহার করার কারণে মুন্দরহাটি, বাঁশহাটা, সাঁথুলিয়া, হাসিনকান্দি, বসন্তেরপাড়াসহ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানিতে দেবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের বাঁশহাটা উকুনপাগলীর মোড় থেকে উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের (শেষ সীমানা) বসন্তের পাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এ বাঁধটি সংস্কারের জন্য গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প গ্রহণ করে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
তিনটি প্যাকেজে যৌথভাবে বাঁধ সংস্কারের কাজ পান রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান এবং এমএস রহমান। বিগত ২০২৩ সালের শুরুর দিকে এ বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়। প্রথমে বাঁধের গোড়া থেকে গভীর করে মাটি কেটে ওপরে তোলা হয়। পরে যমুনা নদী থেকে ভলগেট দিয়ে বালু এনে বাঁধের গভীরতা পূরণ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের গোড়া কেটে গভীর করা এবং বাঁধের বারাম (নিচের অংশ) খোঁড়াখুঁড়ি ও অতিরিক্ত ভেপু ( বুলডোজার) ব্যবহার করার ফলে বাঁধটি দুর্বল হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানির তোরে বালু ধসে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বড় ও মাঝারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশায় চলাচল করতে গিয়ে উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এমতাবস্থায় রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) নয়ন রায় বলেন, এই মুহূর্তে রাস্তা মেরামত করার কোনো উপায় নেই। পরবর্তীতে বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্ভব হবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, বাঁধটিতে বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েক জায়গায় ধসে গেছে। বাঁধের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। ধসে যাওয়া স্থানে মাটি দিয়ে দ্রুত ভরাট করে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আরএ