রাঙামাটি: রাঙামাটির প্রায় তিন লাখের অধিক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বর্তমানে সরকার জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়াতে তিনটি উপজেলাকে (বাঘাইছড়ি,লংগদু, নানিয়ারচর) সংযোগ করতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু’ আঞ্চলিক সংযোগ সড়কের উদ্যোগ নিয়েছে।
আঞ্চলিক সড়কটির নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়ার খবরে ওই এলাকায় বসবাসরতদের মনে স্বস্তি নেমে আসে।
সড়কটি নির্মিত হলে জেলার তিনটি উপজেলার বাসিন্দারা জেলা সদর, পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মহালছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের সাথে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা অতিসহজে ফলজ, বনজ এবং কৃষি পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারজাত করতে পারবে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজ ও দ্রুত হবে। গড়ে উঠবে পর্যটন নির্ভর নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের দ্রুত উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হবে।
পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন প্রসিত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এই উন্নয়নকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থি মনে করে সড়ক নির্মাণে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বিরোধিতা করছে। অতীতে বহুবার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিয়েছে ইউপিডিএফ। তবে এ বিষয়ে ইউপিডিএফর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে রাঙামাটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইউপিডিএফর সড়কবিরোধী এ কর্মসূচির নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, সড়ক নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। অতীতে যেভাবে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করে উন্নয়ন এগিয়ে গেছে এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।
নানিয়ারচর কলেজের শিক্ষার্থী ত্বনয়া চাকমা বলেন, আমাদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে, সড়কটি নির্মিত হলে কলেজে আসতে সহজ ও নিরাপদ হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসার বিকাশ ঘটবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও লংগদু উপজেলার বাসিন্দা মিনহাজ মুরশীদ বলেন, এ আঞ্চলিক সড়কটি জনমানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সড়কটি নির্মিত হলে তিনটি উপজেলার বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সেনাবাহিনীর ২০ ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের অধীনে একটি সেতু নির্মাণ করে সংযুক্ত করেছে পুরো নানিয়ারচরকে। এরপর নানিয়ারচর উপজেলার সাথে লংগদু-বাঘাইছড়ি উপজেলার সংযোগ সড়কের ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু আঞ্চলিক সড়কটির ১৩ দশমিক ৮২ কিলোমিটার অংশ আগে থেকেই পাকা করা ছিল। বাকি ২৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়কটি বানালে তিন উপজেলাবাসীর ভাগ্যের দুয়ার খুলবে।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, এই সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে চলতি বছরের ৪ মে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এই পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণী পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম নেওয়া হবে। সড়কটি যদি বাস্তবায়িত হয়। পাহাড়ের জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে। এই সড়ক নানিয়ারচর, লংগদু এবং বাঘাইছড়ির বাসিন্দারা উপকৃত করবে।
প্রকৌশলী আরও বলেন, অন্যদিকে নদীপথে যাতায়াতে দ্বিগুণ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। শুকনো মৌসুমে নদী পথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীরা সর্বাধিক দুর্ভোগে পড়ে। সড়ক নির্মাণ হলে জরুরি চিকিৎসা দ্রুত পাওয়া যাবে।
এএটি