ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

সিসিকের ‘অসময়ী পরিকল্পনায়’ কোটি টাকা জলে

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৫, মে ২১, ২০২৫
সিসিকের ‘অসময়ী পরিকল্পনায়’ কোটি টাকা জলে

সিলেট: নগরের আকাশে মেঘ জমলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নাগরিক মনে। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে নোংরা পানি।

নগরের ছড়া, খাল ও ড্রেনগুলো বছরের পর বছর অবহেলিত থাকায় জলাবদ্ধতা নিয়মিত দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। অথচ, প্রতিবারই সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নেয় খাল-ছড়া পরিষ্কারের, ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা— কিন্তু ফলাফল শূন্য। এবারো ব্যতিক্রম নয়।

একটা সময় সিলেট ছিল ছড়া-খালের শহর। এখন সেই ছড়া-খালগুলো বর্জ্যে ভরাট, ড্রেনগুলো বন্ধ, আর মানুষ বৃষ্টির নাম শুনলেই শঙ্কায় থাকে। জানা গেছে, নগরের রাজস্ব খাত থেকে এক কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উদ্দেশ্য, সাতটি ছড়া ও ২৯টি ড্রেন পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশনের পথ স্বাভাবিক করা। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে তখন, যখন বর্ষা প্রায় দরজায়।

আর এই 'বিলম্বিত উন্নয়ন' নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরাও। তারা জানতে চান— ছড়া-খাল উদ্ধার আর ড্রেন পরিষ্কারে যেসব টাকা খরচ হয়, সেগুলো কী সত্যিই জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য? নাকি উন্নয়নের নামে চলছে অনিয়ম আর লুটপাটের উৎসব?

বিগত বছরগুলোয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নগরের এ দুর্ভোগ নিরসনে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু ছড়া-খাল উদ্ধারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও দুর্নীতির কারণে ভেস্তে যায় উদ্যোগের সফলতা। এবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। নগরভবন চলছে প্রশাসকের নেতৃত্বে। তাই আমলারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্ততায় ভোগেন।

সিসিকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরাবরের মতো এবারও জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়াখাল ও ড্রেনগুলো পরিষ্কারে বাজেট হয়েছে। কিন্তু ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত উন্নয়নে সে অর্থ নষ্ট হচ্ছে। রাজস্বের কোটি টাকা ব্যয় করেও সুফল না মেলায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

আরেক সূত্র থেকে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিসিকের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়া বাজেটে গাভীয়ার খাল, মালনীছড়া, বলরামের ছড়া, বুবি ছড়া, গোয়ালী ছড়া, হলদী ছড়া ও যোগনী ছড়াসহ অন্যান্য ২৯টি ড্রেন পরিচ্ছন্নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজে প্রাক্কলন ব্যয় ধরে ছড়াগুলো পরিষ্কার করার জন্য ৬০ লাখ ৮০ হাজার ১৭০ টাকা এবং ড্রেনের জন্য ৭১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকসহ মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৬৭০ টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মার্কেট ও বড় স্থাপনার সামনের ড্রেনের অংশে মটরওয়ে, স্ল্যাব ও দোকানের সাটার থাকায় সেই সব জায়গার ময়লা পুরোপুরি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০ ভাগ ড্রেন পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সাতটি ছড়ার পরিষ্কারের কাজ শেষ হয়েছে। পরিষ্কারের কাজ শেষ হয়েছে মোটে ১৭টি ড্রেনের। সাতটি ছড়ার ৪৮ ও ড্রেনের ১০ কিলোমিটার ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১২টি ড্রেনের পরিষ্কারের কাজ চলমান। সব মিলিয়ে ৮০ ভাগ আবর্জনা পরিষ্কারের দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

সিসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন বলেন, সিলেটে মোট উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৪৭৫ টন। সেখানে সিসিক মাত্র ২৪৫ টন ময়লা সংগ্রহ করতে পারে। বাকি ২৩০ টন ময়লা ছড়া এবং ড্রেনে ফেলা হয়। ফলে ছড়া ও ড্রেনগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার নিরসন সিসিকের একার পক্ষে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। জলাবদ্ধতার সঠিক কারণ বের করার জন্য আরও স্টাডির প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নাগরিকদেরকে সচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে হবে। তাহলে আমাদের ছড়া ও ড্রেন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার থাকবে। তাতে করে পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে পারবে। কেননা, জলাবদ্ধতা কমাতে হলে আমাদের ছড়া, ড্রেন ও নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। তাতে খুব সহজে পানি প্রবাহিত হতে পারবে। দিনে দিনে মানুষের বসতি বাড়ার ফলে অনেক পুকুর, ডোবা খাল ভরাট হচ্ছে। মাটির স্বাভাবিক পানি শোষণ হ্রাস পাচ্ছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনগণের অসচেতনতা ও নগর কর্তৃপক্ষের ধীর প্রতিক্রিয়ার কারণে এই দুর্ভোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেছেন, সিলেটে জলাবদ্ধতা হয়, বলা যায় না। বৃষ্টির পানি নামতে একটু সময় লাগে।

কারণ হিসেবে তিনি দীর্ঘদিনের ময়লা আবর্জনার জমে থাকার কারণে ছড়া ও ড্রেনগুলোয় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধায় পায় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অনেক বাসাবাড়ি নিচু জায়গায় তৈরি করেছেন। ফলে সেসব বাসা-বাড়ি পানি উঠলে ডুবে যায়। ইতোমধ্যে আমরা ছড়া, ড্রেন পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। বেশির ভাগ ছড়া ও খাল পরিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই নগরবাসী এর সুফল ভোগ করবেন।

এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।