ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩২, ১৫ মে ২০২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

মা-দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাম্য

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:১০, মে ১৪, ২০২৫
মা-দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাম্য গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল এলাকায় গ্রামের বাড়িতে মা ও দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবিশিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)-কে।  

বুধবার (১৪ মে) রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা থেকে সাম্য’র লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তার গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়।

এসময় শত শত মানুষ তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সাম্য’র আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ সময়। শোকের ছায়া নেমে আসে চারিদিকে।  

রাত ১০টার দিকে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থান ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সেখানেই মা ও দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় সাম্যকে।

জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

সাম্য’র মরদেহ এলো তার গ্রামের বাড়িতে

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে মোটরসাইকেলে আঘাতকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য।  

সাম্যের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার বাবা ফকরুল আলম ফরহাদ অবসরপ্রাপ্ত বিসিসিআই সার কারখানার কর্মকর্তা। তিনি ২০১২ সাল থেকে স্বপরিবারে ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বাস করেন। সাম্যের মা চার বছর আগে মারা গেছেন। চার সন্তানের মধ্যে সাম্য সবার ছোট।  সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ওই হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

সাম্যের প্রতিবেশী নূরনবী সরদার, দুলু সরদার ও কবিরসহ অনেকেই বলেন, সাম্যের মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশীরাও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এভাবে চলে যাওয়া সহজে কেউ মেনে নিতে পারছে না। সাম্যকে আমরা অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত ছেলে হিসেবেই দেখেছি। তাকে কেউ এভাবে খুন করতে পারে সেটা ভাবাই যায় না।

নুরনবী সরদার বলেন, সাম্যের পরিবার ঢাকায় থাকলেও প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতো। পরিবারের সঙ্গে সাম্যও আসতো। গ্রামে এসে সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশতো। সবাই তাকে ভালোবাসতো। ছেলেটির এমন মৃত্যুতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাম্যের বড় ভাই আহসান হাবিব বলেন, ওর সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। উল্লাপাড়ার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আমাদের সবার আদরের ছোট ভাই সাম্য। ওকে এভাবে হারাতে হবে ভাবতেও পারিনি।

সাম্যের চাচা হাজী কায়সারুল আলম কায়েস বলেন, গত শুক্রবার ঢাকাতে আমার বড় ভাতিজির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ছিল ঢাকায়। সেখানে সাম্যর সঙ্গে কথা হয়। জানতাম না এটাই হবে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। সাম্যের কি অপরাধ ছিল যে মা হারা এই ছেলেটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এমন মেধাবী ভাতিজার মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি চাই।

বেলকুচি থানার ওসি মো. জাকারিয়া বলেন, নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের মরদেহ রাত পৌনে ৮টার দিকে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। রাত ১০টার দিকে তার জানাজা শেষে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> গ্রামেও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাম্য হত্যায় অভিযুক্তরা

এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।