ইতালির স্বপ্নে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাদারীপুর জেলার শিবচরের রিফাত তালুকদার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে ধরা দেয়নি—লিবিয়ার সাগরে প্রাণ হারিয়ে অবশেষে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি।
শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের তালুকদারকান্দি গ্রামের হুমায়ুন তালুকদার ও শিল্পী বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত তালুকদার। পরিবারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দালালের মাধ্যমে দেশ ছাড়েন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি পৌঁছানো।
দুই মাস লিবিয়ায় অপেক্ষার পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ইঞ্জিন বিস্ফোরণে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে গুরুতর আহত হন রিফাত। লিবিয়া কোস্টগার্ড উদ্ধার করে তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ সাত মাস পর, শনিবার (১০ মে) বিকেলে রিফাতের মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছায়। বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
রিফাতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার মামা হাবিব মুন্সী বলেন, গত রমজানে জানতে পারি রিফাতের লাশ লিবিয়ার এক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এরপর লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করি।
রিফাতের বাবা হুমায়ুন তালুকদার বলেন, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ওর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। শুধু শুনেছিলাম সাগরে ট্রলার ডুবেছে। আশা করেছিলাম হয়তো বেঁচে আছে। কিন্তু রমজানে জানতে পারি—ও আর নেই।
প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম জানান, ইতালি যাওয়ার পর দুর্ঘটনায় রিফাতের মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন পর লিবিয়ায় অবস্থানকারী এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে তার খোঁজ মেলে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
রিফাতের পরিবার জানিয়েছে, দেশে আর্থিক সংকট না থাকলেও উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য অস্থির ছিলেন তিনি। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ায়। কিন্তু সেই স্বপ্নই পরিণত হয় মর্মান্তিক পরিণতিতে।
এসআরএস