মানিকগঞ্জে সবজি চাষে খ্যাতি অর্জন করেছে সাটুরিয়া উপজেলা। প্রতি মাসে এ অঞ্চলের চাষিরা সবজি বিক্রি করে আয় করছে প্রায় কোটি টাকা।
উপজেলার সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি আড়ত “পল্লী হাট”। প্রতিদিন কায়েক শতাধিক চাষি তাদের নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে হাজির হন এই আড়তে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই সবজি যায় মিনি ট্রাকে করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এরই মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। এতে যেমন নিজেদের সুনাম রয়েছে তেমনি নিজ জেলার এই সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ভোর বেলায় কৃষক তার জমির উৎপাদিত সতেজ সবজি নিয়ে হাজির হন আর পাইকারদের দরদামে মুখরিত থাকছে পুরো আড়ত।
বর্তমানে লাউ, কুমড়া, করলা, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন জাতের সবজির সমাহার এই আড়তে। সবজি চাষিরা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি পাঠিয়ে থাকেন।
সতেজ এবং সুস্বাদু সবজি হওয়ায় এ অঞ্চলের সবজির কদর রয়েছে সর্বদা। যে কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এই অঞ্চলের সবজি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাজধানীর নিকটবর্তী জেলা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পাইকারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পল্লী হাটের সবজি। এই সবজির হাটে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার সবজি বিক্রি করে চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অপরদিকে চাষিরা যাতে তার উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে তার ন্যায্য মূল্য নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন তার জন্য স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থাও করেছেন আড়ত কর্তৃপক্ষ।
সাটুরিয়ার রাধানগর থেকে আসা চাষি মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আমি এই মৌসুমে ৭০ শতাংশ জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছি। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এই সবজির হাটে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার মতো কুমড়া বিক্রি করেছি এবং আরও ৩০/৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভোরে কুমড়া নিয়ে আড়তে আসছি। অন্যদিনের চেয়ে আজ সবজি বেশি আমদানি হয়েছে যার কারণে কুমড়ার দাম কিছুটা কম। প্রতি পিস ১৭ টাকা করে বলছে আরেকটু দেখবো তা না হলে এই দামেই বিক্রি করবো বলে জানান এই কুমড়া চাষি।
হরগজ এলাকার আরও এক চাষি রফিক মিয়া বলেন, এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছি, ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার টাকার মতো লাউ বিক্রি করেছি আরও কয়েক হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো। দাম ভালো পাওয়াতে এই মৌসুমে সব খরচ বাদে অর্ধলাখ টাকার বেশি লাভ হবে। বেশি লাভ হওয়ার একটি কারণ হলো এই সবজির আড়ত আমার বাড়ির কাছাকাছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, ঢাকা থেকে পাইকার আসে অনেক, যার কারণে সব মিলিয়ে প্রতিটি কৃষকেরই এবার সবজিতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকার কাওরান বাজার থেকে আসা পাইকার নবীন মণ্ডল বলেন, এ অঞ্চলে সবজি ক্রয় করতে আসার মূল কারণ হলো- সতেজ সবজি কৃষক জমি থেকে আনেন এবং আমরা দরদাম করে কিনি। যখন সরাসরি কোনো সবজি কৃষকের কাছ থেকে কেনা হয় তখন ওই সবজিতে কোনো ভেজাল থাকে না। আমরা যারা সবজির ব্যবসায় করি তারা বেশ কয়েকটি বিষয় হিসাব করে থাকি- তার মধ্যে হলো সতেজ সবজি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা। এই সব বিষয় যেখানে ভালো হয় সেখানেই আমরা ব্যবসা করি এবং লাভবান হই। এই অঞ্চলের মানুষ যেমন সতেজ সবজি বিক্রি করে ঠিক একইভাবে তাদের ব্যবহারও ভালো আর এই কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে পাইকাররা এই আড়তে আসেন।
সবজির আড়তের ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের সবজির আড়ত সুশৃঙ্খল ও নিরাপত্তার জন্য ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক সব সময় কাজ করেন। প্রতিটি চাষি যাতে তার উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য নিয়ে ফিরতে পারেন সেজন্যও আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি। এছাড়া আমাদের এই আড়তের সবজি নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে যাচ্ছে।
পল্লী হাটের ইজারাদার অ্যাডভোকেট শরিফুল হক রতন বলেন, একটি সময় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেত না। এখন প্রতিটি কৃষক তার উৎপাদিত সবজি দরদাম করে বিক্রি করছে। এ অঞ্চলের সবজি চাষিরা প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করে, যা কিনা মাস শেষে প্রায় কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে।
আরএ