ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

লুকিয়ে লুকিয়ে নতুন পোশাক দেখতাম আর ভাবতাম ঈদ কবে আসবে: মিনু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৬
লুকিয়ে লুকিয়ে নতুন পোশাক দেখতাম আর ভাবতাম ঈদ কবে আসবে: মিনু ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: পবিত্র রমজান মাসে বাংলানিউজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের শৈশব, কৈশোর ও বাল্যকালের রোজা ও ঈদের স্মৃতি জানার চেষ্টা করেছে। আজকের আয়োজনে কথা বলেছেন বিএনপির সাবেক যুগ্মমহাসচিব ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু

বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি। বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন কথা বলেছেন আজকের অতিথির সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য-

ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমাদের পরিবার খুবই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। নামাজ ও রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে কঠোর অবস্থানে থাকতেন বাবা-মা। তাই আমরা ভাই-বোনরা এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেতাম না। মা ভোর রাতে ডেকে দিতেন সেহরি খাওয়ার জন্য।

আমি সেই ৮/৯ বছর বয়স থেকে মাহে রমজানের রোজা রাখি। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। তবে মাঝে-মধ্যে যা ঘটতো তা হলো খেলতে খেলতে দুপুর হলেই ঘরে গিয়ে পানি পান করে ফেলতাম। আর তখন ভাইয়েরা কেউ দেখে ফেললেই মায়ের কাছে গিয়ে আমার নামে নালিশ করে দিত।

তখন মা বলতেন ভুল করে পানি পান করলে রোজা ভাঙে না। তখন আমি খুবই হ্যাঙলা-পাতলা ও দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। তাই ভাই-বোনেরা বলতো আমি ইচ্ছে করেই পানি পান করেছি। এ নিয়ে প্রায় দিনই বাড়িতে হৈ চৈ হতো। এখনও রমজান এলে সেসব কথা মনে পড়লে হাসি পায়।

রমজান মাসের রোজা ধর্মীয়ভাবে একটি ফরজ ইবাদত। আবার মেডিকেল সায়েন্সও বলছে মানবদেহের জন্য রোজা খুব উপকারী। কোরআনে কারিমে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, রমজানে যে, ব্যক্তি রোজা রাখবে তাকে তিনি নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন।

সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখি। কখনও রোজা ভেঙেছি বলে মনে পড়ে না।

১৯৮৮ সালের রমজান মাসে আমি মারাত্মকভাবে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হই। সেই দুর্ঘটনাতেই আমার পা ভেঙেছিল। তবে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসি। সেই সময় আমি হাসপাতালে থেকেও প্রতিটি রোজা রেখেছি।

চার ভাই এক বোনের মধ্যে আমি ছিলাম ছোট। ইফতারের সময় এখন অনেক ফল খাই। কিন্তু তখন এক খেজুর আর কমলালেবু ছাড়া কোনো ফল আমাদের ইফতারে থাকতো না। আমরা বছরে ওই রমজান মাসেই কেবল কমলালেবু খেতে পারতাম। অনেক ভাই-বোন থাকায় খেতে বসলে দ্রুতই ইফতার শেষ হয়ে যেত। তবে সবার ছোট ছিলাম বলে মা আদর করে আমাকে একটু বেশি ইফতার দিতেন।

দশ রমজানের পর আব্বা আমাদের নিয়ে মার্কেটে গিয়ে ঈদের জামা-কাপড় কিনে দিতেন। গিয়ে রঙের পায়জামা-পাঞ্জাবি আমার খুব প্রিয় ছিল। এছাড়া প্যান্ট-শার্ট, জুতা-মুজা, টুপি সবই কিনে দিতেন আব্বা। তবে তখন এখনকার মতো এত জামা-কাপড় ছিল না। আব্বা ঈদে আমাদের যে পোশাক কিনে দিতেন তা দিয়েই আমাদের বছর পার হয়ে যেতো। ওই কাপড় ছিড়তে ছিড়তে আবারও ঈদ চলে আসতো। কিন্তু ঈদের নতুন পোশাক কেনার পর তা পরিধানের জন্য রাতে ঘুম আসতো না। সবার অগোচরে আলমারিতে রাখা পোশাকগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম আর ভাবতাম কবে ঈদ আসবে!

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৬
এসএস/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।