ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ব্যভিচার থেকে পবিত্র মানুষই পরিপূর্ণ মুমিন ও জান্নাতি

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
ব্যভিচার থেকে পবিত্র মানুষই পরিপূর্ণ মুমিন ও জান্নাতি

আজকের তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার। এ প্রসঙ্গে সূরায়ে ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘সে (ইউসুফ) যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে (স্ত্রীলোকটি) তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল।

বলল, এসো, সে (ইউসুফ) বলল, আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি। আমার মালিক আমাকে ভালোভাবে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারীরা সফল হয় না। ... নগরের কতিপয় নারী বলল, আজিজের স্ত্রী তার যুবক-দাস থেকে অসৎকর্ম কামনা করছে, পরকীয়াপ্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে। আমরা তো তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে। স্ত্রীলোকটি যখন তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শোনল, তখন সে তাদের ডেকে পাঠাল। ... সে বলল, এই সে যারা সম্পন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করেছি কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে। সে যদি আমার কথা না মানে তবে আমি তাকে কারাগারে দিব। সে লাঞ্চিত হবে। ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার প্রতি আহ্বান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হব। অতঃপর তার প্রভু তার আহ্বানে সাড়া দিলেন। তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। ’

এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনের আরও কয়েক স্থানে আলোচিত হয়েছে। যেমন- ‘এবং যে ব্যক্তি তাদের (নিজের বিবাহিত স্ত্রীদের) ছাড়া আর কউকে কামনা করবে সে হবে চরম সীমা লংঘনকারী। ’ –সূরা মুমিনুন: ৭, আল মাআরিজ: ৩১

ইসলামের সমাজ, আইন ও বিচার ব্যবস্থার দৃষ্টিতে ব্যভিচার হলো সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তি যদি অবিবাহিত হয় তবে তার শাস্তি হবে একশ’ দুররার আঘাত। আর সে যদি বিবাহিত হয় তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত পাথর ছোঁড়ে মারা। যথাযথ নিয়মে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অকাট্যভাবে অপরাধ প্রমাণিত হলে সমাজ ও রাষ্ট্র স্বীকৃত বৈধ আদালত অপরাধীর ব্যাপারে শাস্তির ডিগ্রি জারি করবে। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ সে শাস্তি কার্যকর করবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচার হলো- চারিত্রিক অধঃপতন, অনৈতিকতা, নোংড়ামি ও অশ্লীলতার শেষ ধাপ। ইসলাম এ কাজকে ঘৃণা করে। ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য কিভাবে চেষ্টা করতে হবে তা শিখানোর জন্য পবিত্র কোরআনে তরুণ ইউসুফ (আ.)-এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। সব ধরণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাধর মালিকের স্ত্রীর অসৎ আহ্বান তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানতেন, এ প্রত্যাখ্যানের জন্য তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী হতে হবে। তিনি জেনে-বুঝেই অশ্লীল আহ্বানে সাড়া দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। কারাগার বরণ করেছেন কিন্তু ব্যাভিচারে লিপ্ত হননি। শাস্তির জীবন মেনে নিয়েছেন কিন্তু চরিত্র হননের পথে অগ্রসর হননি। সূরা মুমিনুন ও সূরা আল মাআরিজে মুমিনের গুণাবালী, পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে যেয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, মুমিনরা নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। নিজেদের বিবাহিত স্ত্রী ছাড়া আর কোথাও তারা কামনা পূরণ করে না।

পাশ্চাত্য অসভ্য সমাজ ব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিক্ষিতদের অনেকেই মনে করে, কোনো নর-নারী যদি নিজেদের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন তবে কোনো পাপ হয় না। তারা ব্যাভিচারকে কোনো অপরাধ জ্ঞান করেন না। শুধুমাত্র ধর্ষণকে অপরাধ মনে করেন। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। মহান আল্লাহ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক হারাম করেছেন। তাই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না করে, জোর করে হোক আর সম্মতিতে হোক, যেভাবেই হোক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা মহাপাপ। এটা গুরুতর অপরাধ। ধর্ষণ যেমন অপরাধ, ব্যাভিচারও তেমনি গর্হিত দণ্ডনীয় অপরাধ। মুমিন হতে হলে, জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে ব্যভিচার থেকে পবিত্র হতে হবে।
ব্যভিচারের কলুষতা থেকে সমাজকে বিশেষত তরুণ সমাজকে পবিত্র রাখতে হলে বিবাহকে সহজ করতে হবে, সহশিক্ষা ও সহকর্ম বন্ধ করে পৃথক শিক্ষা ও পৃথক কর্মক্ষেত্র চালু করতে হবে, নাটক-সিনেমার প্রেম নির্ভর গল্প হ্রাস করতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মভিত্তিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘন্টা, জুন ১৪, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।