ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার শিক্ষা

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৫
আজ পাঠ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার শিক্ষা

আজ অনুষ্ঠিত হবে ২১তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২৪তম পারা।

আজ ৩২নং আয়াত থেকে শুরু হয়ে সূরা যুমার শেষ হবে। এরপর তেলাওয়াত করা হবে সূরা মুমিন ও  সূরা হামীম সাজদার ৪৬নং আয়াত পর্যন্ত।

আজকের তারাবিতে সূরা যুমারের পঠিতব্য অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৪৭-৪৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যদি গুনাহাগারদের নিকট সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু এবং আরো অনুরূপ বস্তু থাকত তবে কিয়ামতের দিন ভয়ঙ্কর আজাব থেকে বাঁচার জন্য তারা তা দিতে প্রস্তুত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এমন পরিস্থিতি তাদের সামনে উপস্থিত হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারছে না। তাদের গুনাহসমূহ তাদের সামনে প্রকাশ পাবে। যা নিয়ে তারা বিদ্রুপ করত, এবং তা তাদের ঘিরে ফেলবে।

৫৩-৫৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা গুনাহ করে নিজের আত্মার ওপর নির্যাতন করছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। (ইসলাম পূর্বকালের সব গুনাহ আল্লাহতায়ালা ইসলাম গ্রহণ করার দ্বারা ক্ষমা করে দেন। ইসলাম গ্রহণ করার পরের গুনাহ তাঁর কাছে তাউবা করলে তিনি মাফ করে দেন। ) তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ফিরে আস। তার বিধানের সামনে নিজেকে সমর্পণ কর। আল্লাহর শাস্তি আসার আগেই তা কর। শাস্তি এসে গেলে তখন আর কোনো সাহায্য পাবে না। শাস্তি আসার আগেই অবতীর্ণ সর্বোত্তম বিধানের অনুসরণ কর। তোমরা অনুভবই করতে পারবে না, কখন যে তোমাদের ওপর শাস্তি নেমে আসবে।

৬৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তখন সমস্ত আকাশ জমিনের অধিবাসীরা সঙ্গাহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু আল্লাহ যাদের ব্যপারে ইচ্ছা করবেন তারা ব্যতীত। অতপর আবার সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তখন হুড়মুড় করে সবাই দাঁড়িয়ে যাবে এবং দেখতে থাকবে। জমিন স্বীয় প্রভুর আলোয় উদ্ভাসিত হবে। আমলনামাগুলো উপস্থিত করা হবে। নবীগণ ও স্বাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে। সকলকে ন্যয় ফয়সালা দেয়া হবে। তাদের প্রতি বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবে না।

সূরা মুমিন
সূরা মুমিন কোরআনে কারিমের ৪০তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৮৫টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

১১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জাহান্নামীরা পরকালে জাহান্নামে প্রবেশ করে শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের দু’বার মৃত রেখেছিলেন। দু’বার জীবিত করেছেন। আমরা আমাদের সকল অপরাধ স্বীকার করছি। (আরেকবার মৃত্যুবরণের মাধ্যমে এ জাহান্নাম থেকে) বের হওয়ার উপায় আছে কি?

৩৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, দুনিয়ার জীবন সামান্য কয়েকদিনের ভোগ মাত্র। আসলে পরকালই হলো চিরস্থায়ী ঠিকানা।
৪৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, কাফেররা জাহান্নামের ভিতর ঝগড়া-বিবাদ শুরু করবে। দুনিয়ার দুর্বল শ্রেণির জাহান্নামীরা নেতৃবৃন্দকে বলবে, আমরা তো দুনিয়াতে তোমাদের কথা মতো চলতাম। অতএব, আজ তোমরা কি পরবে, আগুনের কিয়দাংশ আমাদের থেকে সরাতে? আজকের জাহান্নামী নেতারা সে দিন উত্তর দিবে, আমাদের সবারই তো এক অবস্থা।

সূরা হামীম সাজদা
সূরা হামীম সাজদা কোরআনে কারিমের ৪১তম সূরা।   এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫৪টি। আজ তেলাওয়াত করা হবে ৪৬নং আয়াত পর্যন্ত। আজকের পঠিতব্য অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৩নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে কোরআনের ভাষা আরবী। অতএব, কোরআনের ভাষান্তর করলে তা কোরআন থাকে না। যদিও ভিন্ন ভাষীদের বুঝার জন্য ভাষান্তরের দরকার আছে, ভাষান্তর করতে হবে।

১৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে দিন আল্লাহর শত্রুদের (যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করে তারা আল্লাহর শত্রু। যারা আল্লাহর আইনের সঙ্গে শত্রুতা করে তারাই আল্লাহর শত্রু) একত্রিত করে জাহান্নামের দিকে আনা হবে। যখন তারা জাহান্নামের কাছে চলে আসবে তখন তাদের কান, চোখ, তক তাদের কৃতকর্মের ব্যপারে স্বাক্ষ্য দিবে।

২৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, কাফেররা বলে, (হে দেশবাসী!) তোমরা কোরআনের আলোচনা শোনবে না। কেউ তোমাদের কোরআন বুঝানোর চেষ্টা করলে হট্টগোল বাঁধাবে। তবে তোমরাই জয়ী হবে।

২৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, কিয়ামতের দিন কাফেররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যে সব মানুষ (নেতারা, শিক্ষকরা, অভিভাবকরা) ও জিন দুনিয়াতে  আপনার ইবাদাতের ও বিধানের পথ থেকে আমাদের দূরে রেখেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করান। আজ আমাদের পায়ের নীচে ফেলে তাদের পিষ্ট করব, নিকৃষ্টভাবে আজ তাদের অপদস্থ করব।

৩০-৩১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা স্বীকার করে আমাদের প্রভু আল্লাহ। অতপর হাজারো বাঁধা উপেক্ষা করে এ দাবির ওপর তারা অটল থাকে তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা এসে তাদের মনে সাহস জোগায়। বলে, তোমরা ভয় পেয়ো না। চিন্তা করো না। যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হয়েছিল সে জান্নাতের অভিনন্দন গ্রহণ কর। আমরা দুনিয়াতেও তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, মৃত্যুর পরের জীবনেও তোমাদের সঙ্গে থাকব। পরের জীবনে তোমরা যা চাবে তা-ই তোমাদের জন্য প্রস্তুত পাবে।

৩৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সদ্ব্যবহার কখনোই দুর্ব্যবহারের সমান নয়। আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে সদ্ভাবে মোকাবেলা করুন। তাহলে যারা আপনার শত্রুতা তারা আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘন্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।