
যশোর: যশোর অঞ্চলের ১০ জেলার মাঠগুলো পাটে গাছের সবুজ রঙে ছেয়ে গেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাট আর পাট। এরপরও কৃষক স্বস্তিতে নেই। মাত্রাতিরিক্ত খরা, অনাবৃষ্টি আর পোকার আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ভালভাবে পাট ঘরে তোলা যাবে কিনা তা নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের ১০ জেলায় মোট দু’ লাখ চৌদ্দ হাজার ৯১২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মেছতা পাট ১০০ হেক্টর, দেশি জাতের পাট ৭৫১ হেক্টর এবং তোষা জাতের পাট দু’ লাখ চৌদ্দ হাজার ৬১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। মেছতা পাট চাষ হয়েছে শুধু বাগেরহাট জেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলাভিত্তিক মোট চাষকৃত জমির পরিমাণ যশোরে ২৯ হাজার ৫০ হেক্টর, ঝিনাইদহে চব্বিশ হাজার ৭৮৭ হেক্টর, মাগুরায় তেত্রিশ হাজার ৬৭৫ হেক্টর, নড়াইলে চব্বিশ হাজার ৩৬০ হেক্টর, খুলনায় তিন হাজার ৪৬১ হেক্টর, বাগেরহাটে এক হাজার ৫৬০ হেক্টর, সাতক্ষীরায় এগার হাজার ৯৩৪ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় আটত্রিশ হাজার ২৩০ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় তেইশ হাজার ৪০ হেক্টর এবং মেহেরপুরে চব্বিশ হাজার ৭৪৪ হেক্টর।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ার মাহিদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দস জানান, চাষ ভাল হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে ক্ষেত বাঁচানো দুস্কর হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘মাঠে ইদানিং ঘোড়াপোকা আর মাইজপোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এসব পোকা পাটপাতাকে এক জায়গায় গুটিয়ে ফেলছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শফিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খুব একটা সিরিয়াস না। তেমন কিছু হলে মাঠ পর্যায় থেকে রিপোর্ট আসতো। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কোনো কোনো স্থানে এমনটি হয়েছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর উপপরিচালকের কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ওহিদুর রহমান বলেন, ‘এ সময় যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা তা না হওয়ায় এবং খরার কারণে দিনের বেলায় পাতা ঝিমিয়ে পড়ছে। রাতে ফের চাঙা হয়ে উঠছে।’
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মাত্র ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি পাটচাষের জন্য যথেষ্ঠ নয়। যদি দ্রুত বৃষ্টি না হয় তাহলে হয়তো হালকা সেচ দিয়ে পাটগাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তখন কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শাহজাহান মিঞা বলেন, ‘পাটক্ষেতে সাধারণত ঘোড়াপোকা, মাইজপোকা এবং শুয়োপোকার আক্রমণ হয়। এটি গাছের উপরও প্রভাব ফেলে। তবে, এ বিষয়ে এখনো কোন সংবাদ মাঠ পর্যায় থেকে আসেনি। কোথাও পোকা আক্রমণের খবর পাওয়া গেলে এখনই তা মেরে ফেলতে হবে। পোকা বেশি হলে কীটনাশক ছিটাতে হবে। ভয়ের কেনো কারণ নেই।’
চৌগাছার সিংহঝুলি গ্রামের কৃষক তৌফিকুজ্জামান বলেন, ‘জমি চাষ, নিড়ানি, বীজ কেনা এবং সার কেনা বাবদ প্রতি হেক্টর জমিতে পাটচাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ২৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এরপরও যদি জমিতে সেচ দেওয়ার দরকার পড়ে তাহলে ব্যয় আরো প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। তার উপর জমিতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এটি রোধ করতে হলে কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হবে। এতে ব্যয় বৃদ্ধি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশে পাটের দাম আশাতীত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর কৃষক পাট উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, গতবার তারা দাম পায়নি। প্রথমদিকে কেউ কেউ দেড় হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করলেও শেষ পর্যন্ত ৫শ’ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এবারও যদি সেরকম হয় তাহলে কৃষকের মাথায় হাত পড়বে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১১