
ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ৪র্থ বারের মতো বিদেশি বন্ধুদের মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা দিলো সরকার।
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬০ জন বিদেশি বন্ধু বা তাদের প্রতিনিধির হাতে সম্মাননা পদক ও সনদ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সমতা, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, সামগ্রিক উন্নয়ন এবং আইনের শাসনের প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল। বিশ্ব বাংলাদেশকে আজ একইসঙ্গে একটি আধুনিক এবং অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসাবে চেনে।
বিদেশি বন্ধুরা আমাদের আশা-আকাঙ্কা এবং দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় ঝুকি নিয়েও দেশের সরকারের বিরুদ্ধে আপনারা দাঁড়িয়েছেন। মানবতার জন্য এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতীর পক্ষ থেকে বিদেশি বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিদেশি এ বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকবে।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী তার অাশু রোগ মুক্তির জন্য দেশবাসীর দোয়া চান।
প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, ভারতের বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আগত তার ছেলে জয়কে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
সম্মাননা নেওয়া বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে রয়েছেন- মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বীরপ্রতীক খেতাব অর্জনকারী একমাত্র বিদেশি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ডাব্লিও এ এস ওডারল্যান্ড, বাঙালির পক্ষে কথা বলে নিজ দেশে শাসকের রোষানলে পড়া পাকিস্তানি সাইয়েদ আসিফ শাহকার, কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্র, তার স্বামী রমেন মিত্র, গণসঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ সলিল চৌধুরী, কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে, চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক ঋত্মিক ঘটক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন, রাজনীতিক বাঘা যতীন, নেপাল নাগ, নিবেদিত নাগ, সাংবাদিক বাসব সরকার, বরুণ সেনগুপ্ত প্রমুখ।
৬০ ব্যক্তি ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র প্রাভদা ও ত্রিপুরার একটি হাসপাতালকেও সম্মাননা দেওয়া হয়।
ওডারল্যান্ডের পক্ষে ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার, প্রয়াত ইলা মিত্র ও রমেন মিত্রের পক্ষে তাদের ছেলে রমেন্দ্রনাথ মিত্র মোহন, প্রয়াত মকবুল ফিদা হুসেনের পক্ষে তার ছেলে শামসাদ হোসেন, ঋত্মিক ঘটকের পক্ষে তার মেয়ে সমহিতা ঘটক, প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে তার ভাই অনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে ছেলে জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় পদক নেন।
এ তালিকায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজি ও কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নামও ছিলো।
তবে তারা কেউই সম্মাননা নিতে বাংলাদেশে আসেননি।
এখন না আসতে পারলেও আগামীতে সুবিধামতো সময়ে আরেকটি অনুষ্ঠান করে প্রণব মুর্খাজিকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপটেন (অব.) তাজুল ইসলাম।
আর ফিদেল ক্যাস্ট্রো আসতে না পারলেও তার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আরো ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। তবে অসুস্থতার কারণে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন নি।
এর আগে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ৩ পর্বে ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বন্ধু নাগরিকদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১২
এসকে/কেজেড/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর,নিউজরুম এডিটর/জেডএম