ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

পেট্রোবাংলার এলএনজি টার্মিনাল দরপত্র দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১১
পেট্রোবাংলার এলএনজি টার্মিনাল দরপত্র দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

ঢাকা: এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দরপত্রে জালিয়াতির কারণে দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) অভিযোগ করেছে মার্কিন কোম্পানি সিএইচ৪। দুদক এরই মধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।



‘দুদক অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগকারীকে রোববার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির থাকার জন্য চিঠি দেয়। সে মোতাবেক সিএইচ৪ হাজির হয়ে প্রমাণ উস্থাপন করে বলে সিএইচ৪ জানিয়েছে।

সিএইচ৪ অভিযোগ করেছে তারা চূড়ান্তভাবে মনোনিত হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানি পোটেন অ্যান্ড পার্টনারকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

‘প্রয়োজনে আদালতেও যাবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটির প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান। ’

কোম্পানিটি দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছে, দরপত্রে বিশ্বের ২৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্য থেকে ৬টির কোম্পানির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়।

পরে সিএইচ৪ কোম্পানিকে মূল্যায়ন কমিটি চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের জন্য চিঠি দেয়।

সে মোতাবেক বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বরে সিএইচ৪ ও পেট্রোবাংলার মধ্যে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।

এমওইউ স্বাক্ষরের পরে পেট্রোবাংলা খসড়া চুক্তির কপি দেয় সিএইচ৪ কোম্পানিকে। কোম্পানি পরে সেটি আংশিক সংশোধনের প্রস্তাব দিলে ১৭ মে ২০১১ তারিখে তা গ্রহণ করে পেট্রোবাংলা।

এর পরে চুক্তির স্বাক্ষরের জন্য দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। পেট্রোবাংলার পক্ষে সময় বাড়ানোর জন্য মোট ৬টি চিঠি দেয় বলে সিএইচ৪ দাবি করেছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি পেট্রোবাংলা আমাদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ ছাড়াই অষ্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান প্রটেন অ্যান্ড পার্টনারকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানতে পেরেছি। যা দরপত্র আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

‘একই সঙ্গে আরপি (রিকোয়েস্ট অফ প্রপোজল) ডকুমেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান প্রটেন অ্যান্ড পার্টনার আইনানুযায়ী এই দরপত্রে কোনওভাবেই অংশ নেওয়ার যোগ্যতা রাখেন না । তারপরেও সকল আইন অমান্য করে প্রটেন অ্যান্ড পার্টনারকে কাজ দিতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কিউএসবি (কোয়ালিটি বেসড লাম সাম প্রপোজল) মোতাবেক সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন দর কোনওটাই গ্রহণ যোগ্য হবে না। শুধুমাত্র কারিগরিভাবে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের দরপত্র খোলা যাবে।

এই শর্ত অমান্য করা হলে তা ব্যাপক দুর্নীতি বলে বিরেচিত হবে। যা বিশ্বের সব আদালত কর্তৃক আইনসিদ্ধ। তারপরেও প্রটেন অ্যান্ড পার্টনার এর দরপত্র খোলা হয়েছে।

এছাড়া সিএইচ৪ কে পরার্মশক নিয়োগ দেওয়ার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্দেশনাও পেট্রোবাংলা মানছেন না বলেও অভিযোগে করা হয়েছে।

২৫ অক্টোবর দুদকে এ অভিযোগ দায়ের করেন সিএইচ৪ এর কান্ট্রিডিরেক্টর রাকিবুল হোসেন। অভিযোগে এমওইউ এবং বিভিন্ন সময়ে দেওয়া চিঠি প্রমানপত্র হিসেবে উস্থাপন করে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান করা হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করেছে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে প্রটেন অ্যান্ড পার্টনারকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একটি সূত্র দাবি করেছে প্রটেন অ্যান্ড পার্টনার ২০০৬ সালে পাকিস্তানে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব পেলেও এখন পর্যন্ত টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারেনি।

‘প্রটেন অ্যান্ড পার্টনারকে দায়িত্ব দিলে বাংলাদেশেও কাজটি না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সূত্রটি দাবি করেছে। ’

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে
জানান আমরা দীর্ঘদিনে ধরেই বলে আসছি জ্বালানি মন্ত্রণালয় কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে। এখানে দেশের স্বার্থে কোনও কাজ হয় না।

আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে চুক্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দুদকের সহকারী কমিশনার মলয় কুমার সাহা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা তাদের প্রমাণপ্রত্র যাচাই বাছাইয়ের জন্য আজকে ডাকা হয়।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্লানিং) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রটেন অ্যান্ড পার্টনারকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তারা কাজ শুরু করবে।

দুদকে অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি তিনি জেনেছেন উল্লেখ করে বলেন, দুদককে সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি আমরা।

সিএইচ৪ এর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এমওইউ তো অনেকের সঙ্গে হয়। সব কি চুড়ান্ত করা হয়?

তবে তিনি প্রপেন অ্যান্ড প্রপার্টিজের মাধ্যমে দরপত্র তৈরি করার তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর কোনও মন্তব্য নেই বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, দেশের বাড়ন্ত গ্যাস সংকট মোকাবেলায় কাতার থেকে দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আওতায় মহেষখালীতে টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। এর থেকে ৮০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা।

বিশ্ব ব্যাংকের অনুদানের অর্থে গৃহীত এ প্রকল্পের জন্য ২১ জুন ২০১০ তারিখে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।