ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘লোডশেডিং নেই’, ‘লোডশেডিং আছে!’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
‘লোডশেডিং নেই’, ‘লোডশেডিং আছে!’ গ্রাম-শহরের কেউই রেহাই পাচ্ছেন না লোডশেডিং থেকে (ফাইল ফটো)

ঢাকা: গ্রামের লোকজন বলছেন, দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের এ বিভ্রাট থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না খোদ রাজধানীবাসীও।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দাবি করছে, কোনো লোডশেডিং নেই।


 
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ার আলহাজ শাহানুর ইসলাম লেলিন মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরের পরিস্থিতি একটু বেশিই খারাপ মনে হচ্ছে। একটা সময় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে (শুক্র ও শনি) লোডশেডিং কম হতো। এখন শুক্র-শনি, ঈদ-পূজা কিছুই মানা হচ্ছে না।
 
তিনি জানান, শুক্রবার (০৬ অক্টোবর) রাত ৯টার পর থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের পর ভোররাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ভোর ৪টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টায় মাত্র ৩ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিলো, বাকি চার ঘণ্টাই কেটেছে বিদ্যুৎবিহীন।
 
চাঁদপুরের গৃহিণী শামীমা আক্তার বলেন, প্রত্যেক ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হয়েছে, নিস্তার মিলছে না দিনের বেলায়ও। গরম যেদিন বেশি থাকে, লোডশেডিংও বেশি থাকে।
 
খোদ রাজধানীর আদাবর ৬ নম্বর রোডের বাসিন্দা তানভীর রাব্বি বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার দুপুর ২টায় লোডশেডিং শুরু হয়, বিদ্যুতের দেখা মেলে ৩ ঘণ্টা পর। বিশ মিনিটের মতো ছিলো, এরপর ফের লোডশেডিং শুরু হয়। এবারে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া।
 
বিতরণ কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটি বলেছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ পেয়েছে তারা।
 
রংপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার নুরুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা ৭টা- রাত ১১টা) আমাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিলো ৫৩ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সরবরাহ পেয়েছি মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ অর্ধেকের চেয়েও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে’।
 
‘ওইদিন দিনের বেলা ৩২ মেগাওয়াট চাহিদার স্থলে পাওয়া গেছে ২২ মেগাওয়াট। যে কারণে দিনের বেলায়ও লোডশেডিং করতে হয়েছে ১০ মেগাওয়াট। আবার মধ্যরাতে ৩৫ মেগাওয়াট চাহিদার স্থলে মিলেছে ৩১ মেগাওয়াট। ফলে মধ্যরাতেও লোডশেডিং করতে হয়েছে’- দাবি নুরুর রহমানের।
 
চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পিক আওয়ারে ৪৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পেয়েছি ৩৫ মেগাওয়াট। ওই ১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে’।
 
তবে লোডশেডিংয়ের তথ্য মানতে নারাজ বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান পিডিবি। তারা মুখেও বলেছে, ওয়েবসাইটেও উল্লেখ করেছে, লোডশেডিং নেই। বৃহস্পতিবার সারাদেশ থেকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেলেও সেদিনের তথ্যে পিডিবি’র ওয়েবসাইটে লেখা- ‘জিরো লোডশেডিং’।
 
পিডিবি’র সদস্য (বিতরণ) প্রকৌশলী ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, উৎপাদনের কোনো ঘাটতি নেই। কোথাও কোথাও বিতরণ ব্যবস্থার ঘাটতিতে বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে। এটিকে লোডশেডিং বলা যাবে না।
 
রংপুর ও চাপাইনবাবগঞ্জে বৃহস্পতিবারের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন, আমি জানি না। তবে কোনো লোডশেডিং ছিল না’।
 
‘এমন কথাও শোনা যায়, দূরের ফিডারগুলোতে বিদ্যুৎ বেশি দিলে সিস্টেম লস বেড়ে যাবে। সে কারণে সমিতিগুলো ইচ্ছা করেই বিদ্যুৎ না নিয়ে লোডশেডিং করে। আমার এ কথার যেমন প্রমাণ নেই, তেমনি লোডশেডিং হচ্ছে- তাদের সে কথারও কোনো প্রমাণ নেই’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।