ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

নগরজুড়ে পানি সংকট, পুরান ঢাকা ছাড়ছে অনেকে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১১
নগরজুড়ে পানি সংকট, পুরান ঢাকা ছাড়ছে অনেকে

ঢাকা: ‘এক মাস ধরে পানির তীব্র সঙ্কট। ওয়াসার কর্মকর্তা, স্থানীয় এমপি (ঢাকা-৭ আসন) ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ওয়ার্ড কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কোনো সুরাহা হয়নি।

এক কিলোমিটার দূরে উর্দু রোডের মোড় থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে উমেশ দত্ত রোডের বাসিন্দাদের। পানির সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়েছি। এরই মধ্যে অনেকে ভাড়াটিয়া এলাকা ছেড়েছেন। ’

এলাকায় পানি সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে এভাবেই অভিযোগ জানালেন বকশীবাজার ৮ উমেশ দত্ত রোডের বাসিন্দা আইয়ুব হারুন।

তিনি বলেন, ‘অনেক এলাকায় পানি আসে, পানি যায়। পুরান ঢাকার উমেশ দত্ত রোড, জয়নাগ রোড, উর্দু রোড, কমলদহ রোড, খাজে দেওয়ান প্রথম লেনে পানিই আসে না। ’

‘পানি সংকট সমাধানের জন্য, স্থানীয় এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কমিশনার শাহেদা মোর্শেদ এবং মডস জোন-২ (ওয়াসা চাঁদনী ঘাট) এর প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ধর্না দিয়েছি। তারা সকলেই আশ্বাস দিলেও কোনো প্রতিকার পাইনি আমরা। ’

তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে উমেশদত্ত রোডের ৮ নম্বর বাসার মোশাররফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।

ঢাকা ওয়াসার এমডির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) প্রশ্ন- তাহলে তারা বেঁচে আছে কেমনে?

খাজে দেওয়ান প্রথম লেনের বাসিন্দা ওহিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ৩ দিন ধরে পানি পাইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়ে আজকে গোসল করেছি।  

তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে একটু পানি এলেই কাড়াকাড়ি লেগে যায়। দিনে রাতে মিলে সর্বোচ্চ ৩ হতে ৪ ঘন্টা পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। তিনদিন ধরে পানি না পেয়ে কি কষ্টে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ’

খাজে দেওয়ান লেনের ২৮/২ এর বাসিন্দা আলহাজ্ব মোহাম্মদ মাসুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘আর কইয়েন না, বহুত মসিবতে আছি। ’

একই এলাকার বাসা ৪ এর বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘কমু কিলা, জান বাঁচতাছে না। ওইজে চাপ কলডা দেখতাছেন, হেইডা আমগোর জান বাঁচাই রাখছে। এইডা না থাকলে মানুষ মইরা যাইতো  বিহালে পানি আইলে আইয়েন দেইহেন পানি লাইগ্যা ক্যামনে দাঁড়ায়। ’

গতকাল সেহেরির পরে পানির অভাবে ওজু করতে পারিনি বলে তিনি দাবি করেন।

উর্দু রোডের নূর জাহান ফার্মেসির স্বত্বাধীকারী নুরুল ইসলাম বলেন, কখনও এই ধরেণ পানি সংকটের মুখে পড়িনি। আগে দেখতাম বিদ্যুতের আসা যাওয়া এখন দেখছি পানির আসা যাওয়া।

উমেশদত্ত রোডের ১৪/১ বাসার কেয়ারটেকার আজাহার আলী বলেন, রাত জেগে বসে থাকতে হয় কখন পানি আসবে।

উমেশদত্ত রোডের বিসমিল্লা ভ্যারাইটি স্টোর সংলগ্ন চাপ কলে পানি নিতে আসা রিনা বেগম জানায়, এই চাপ কলে দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা পানি থাকে। এই কল থেকে পানি নিয়ে কষ্টে বেঁচে আছি।

১১৫ পশ্চিম ধানম-ির বাসিন্দা হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে তার বাসাসহ ওই এলাকায় পানি নেই। এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি এনে জীবন ধারণ করছেন।

পুরান ঢাকা কিংবা ধানম-ি নয় রাজধানীর মধ্যবাড্ডা, বনশ্রী, বাসাবো, গোরান এলাকা থেকে পানি সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিন এ খান বাংলানিউজকে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, এক মাস পানি না থাকলে তারা বেঁচে থাকে কেমনে?

তিনি আরো বলেন, ‘খাওয়ার পানি না হয় কিনে খায় মানলাম। গোসল এবং অন্যান্য কর্ম সম্পাদন করে কি করে। আমি মানতে রাজি নই এক মাস ধরে পানি নেই। ’

তিনি আরো বলেন, ওই এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা কারো নিজস্ব পানির রির্জাভার নেই। তারা মনে করে ওয়াসা ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করবে। স্থানীয় এমপি কথা বলেছিল আমি তাকেও রির্জাভার বিষয়টি অবহিত করেছি।

ওয়াসার ২৪ ঘন্টা পানি সরবরাহের কথা থাকলেও ২৪ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।

গতকাল শুক্রবার ২২০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ২০৯ কোটি লিটার উৎপাদন হয়েছে দাবি করে বলেন, ক্ষেত্র বিশেষে আঞ্চলিক সমস্যার কারনে সংকট থাকলেও রাজধানীর পানির তেমন কোন সংকট নেই।

স্থানীয় এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেছেন, এলাকায় কিছুটা সমস্যা ছিল। এরই মধ্যে উর্দ্দুরোডের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকার সমস্যা সমাধান করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ২১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।