ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিনিময় দুই মিলিয়ন: তদন্তে গা-ছাড়া ভাব

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
বিনিময় দুই মিলিয়ন: তদন্তে গা-ছাড়া ভাব

ঢাকা: পাঁচ মাস পার হতে চললেও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) এর টেন্ডার জালিয়াতির তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাদের গা-ছাড়া ভাবই দেখা গেছে।

তবে চলতি মাসেই প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
 
প্রাথমিক রিপোর্টে কি থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি যা যা পদক্ষেপ নিযেছে আর যা পেয়েছে সে সব বিষয় তুলে ধরা হবে।
 
তবে কি পাওয়া গেছে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত কমিটির অন্যতম এই সদস্য।
 
অন্যদিকে তদন্ত কমিটি গঠনের অল্পদিন পর থেকেই জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত এপিএসসিএল’র সাবেক এমডি নুরুল আলমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার বাসার ঠিকানায় চিঠি দিলেও সব চিঠিই ফেরৎ এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন নুরুল আলম।
 
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তদন্তকাজে নুরুল আলম কোনোরকম সহায়তা করছেন না। আর তার রহস্যময় আত্মগোপনের কারণে থমকে আছে তদন্ত কাজ। তাই আমেরিকান ব্যাংকে পাচার হওয়ার অর্থের হদিস করতে পারেনি কমিটি। ওয়েল ফারগো’র কাছে পাচার হওয়ার অর্থের বিষয়ে চিঠি দিলেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।  
 
এখানেই শেষ নয়। এই কমিটিতে রাখা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। তাদের সিডিউল সংকটের কারণেও বিলম্বিত হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। একাধিক দফায় বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পিপিআর অনুযায়ী, চূড়ান্ত দর অনুমোদনের পর আপোসরফার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আশুগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২২শ’ ২৬ কোটি টাকার দর পরিবর্তন করে ৩২শ’ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ কারণে বাড়তি ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
 
অভিযোগ উঠেছে, এই অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোকসান হলেও কোম্পানিটির বোর্ড চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং  সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
 
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের দুই মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকো শহরে অবস্থিত ওয়েল ফারগো ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে রয়েছে এপিএসসিএলের সাবেক এমডি প্রকৌশলী নুরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টেই ২ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে।
 
ওই দুর্নীতি নিয়ে বাংলানিউজ রিপোর্ট প্রকাশ করে ২৫ মে। ওই দিনই বিকেলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
 
অন্যদিকে নরুল আলম গা-ঢাকা দেওয়ার আগে এপিএসসিএল থেকে পেনশনের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছেন। সাধারণত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে পেনশন আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে তদন্ত কমিটি গঠনের পর তড়িঘড়ি করে আগের তারিখ দেখিয়ে পেনশনের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
আর এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের আর এক অভিযুক্ত অতিরিক্ত সচিব ও কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। যাকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এপিএসসিএল’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএমএম সাজ্জাদুর রহমান। বাংলানিউজকে তিনি জানিয়েছেন, যথাযথ পদ্ধতি অনুস্মরণ করেই পেনপশ দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।