ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

শ্রীকাইল ষড়যন্ত্র আরো গভীরে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
শ্রীকাইল ষড়যন্ত্র আরো গভীরে ফাইল ফটো

ঢাকা: শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) এখানে খনন প্রক্রিয়া শুরু করলেও তাতে সায় দেয়নি পেট্রোবাংলা।

উল্টো আটকে দিয়েছে ফাইলই।
 
বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, তারা আগস্টে শ্রীকাইল চার নম্বর কূপ খনন কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিলো। এ জন্য বিজয়-১০ রিগটি রেডি করা হয়। পরিকল্পনা ছিলো কৈলাশটিলা-৭ কূপ খনন শেষ হলে বিজয়-১০ যাবে শ্রীকাইলে। কৈলাশটিলা-৭ খনন শেষ হয়েছে ৪ মাস আসে। এতোদিন বিজয়-১০ সেখানে পৌছে যাওয়ার কথা ছিলো।
 
আর এর কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ২০১৪ সালে। বাপেক্স বোর্ড ৩৫৪তম সভায় অনুমোদন দেয় শ্রীকাইল ৪ খননের। এরপর তৈরি করা হয় ডিপিপি (প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব)। ব্যয় ধরা হয় ৬৪ কোটি টাকা। ৫৫৬তম বোর্ড সভায় ডিপিপি অনুমোদন দেয় বাপেক্স।
 
বাপেক্স অনুমোদিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পেট্রোবাংলায় পাঠায়। নিয়ম হচ্ছে পেট্রোবাংলার অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু পেট্রোবাংলায় প্রস্তাব যাওয়ার পর সবকিছু থেকে যায়। বাপেক্সের লোকজন পেট্রোবাংলায় একাধিক দফায় যোগাযোগ করলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
 
বাপেক্স’র মহাব্যবস্থাপক (খনন) সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে সব উদ্যোগ থেমে আছে।
 
বিজয়-১০ রিগটি এখন বেকার পড়ে আছে বলেও স্বীকার করেন বাপেক্সের এই কর্মকর্তা।
 
শ্রীকাইল ও বাঙ্গুরা ভিন্ন দু’টি গ্যাস ফিল্ড হলেও দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটারের মতো। গ্যাসের স্তর অভিন্ন। দু’টি ফিল্ডেই ৩২শ’ মিটার থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। শ্রীকাইল রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স’র মালিকানাধীন। আর বাঙ্গুরা সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জি‘র মালিকানায় রয়েছে। অবস্থা এমন, যে আগে গ্যাস তুলবে সে বেশি গ্যাস পাবে। ক্রিস এনার্জিকে সুযোগ করে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
২০০৭ সাল থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা শ্রীকাইল থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সমালোচকদের দৃষ্টি ফেরাতে ২০১৩ সালে শ্রীকাইল-৪ কূপ খনন করার ঘোষণা দেয় পেট্রোবাংলা। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
 
দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স যখন কূপ খননের জন্য রিগ নিয়ে বসে আছে তখন তাদের না দিয়ে রাশিয়ান কোম্পানি গাজপ্রুমকে কাজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাপেক্সকে ২শ’ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
 
বাপেক্স বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মুখে মুখে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার কথা বলে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বাপেক্সকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা নিজেরা করলে ৬৪ কোটি টাকাতেই সম্ভব। আমাদের রিগ বসে আসে। অথচ গাজপ্রুমকে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে সেই কূপ খনন করার প্রচেষ্টা চলছে।
 
বাপেক্স বোর্ডের ওই সদস্য বলেন, বিজয়-১০ রিগটি এখন বসে থাকবে। গাজপ্রুমকে দিতে হবে কোন যুক্তিতে। বাপেক্স কাজটি অনেক দ্রুত করতে পারতো। কারন রিগ  ও খননের মালামাল সব রেডি রয়েছে। অন্যদিকে গাজপ্রুমকে দিলে তারা নতুন মালামাল সংগ্রহ করবে। তারপর কূপ খনন করবে। শুধু বিলম্ব করার জন্য পেট্রোবাংলা এই ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা ভালো বলতে পারবে। কারণ তারা প্রধান কাজটি করে।
 
বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গুরা ও শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র দুটির দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। মাটির ৩২শ’ মিটার নিচে অভিন্ন ভূকাঠামোতে এখানে গ্যাসক্ষেত্র প্রায় ১৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত।
 
বাঙ্গুরা অংশ থেকে আইরিশ কোম্পানি টাল্লো ও কানাডীয় কোম্পানি নাইকো যৌথভাবে ২০০৬ সাল থেকে ৪টি কূপের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। পরে গ্যাস ফিল্ডটি ক্রিস এনার্জির কাছে বিক্রি করে দেয় টাল্লো।
 
অন্যদিকে শ্রীকাইলে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স ২০১১ সালে একটি এবং ২০১৩ সালে আরেকটি কূপ খনন করে। এ দুটি কূপ থেকে দৈনিক ৪১-৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জির প্রায় তিনগুণ(১২০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন করছে। পাশাপাশি ক্রিস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আরো দুটি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গাজপ্রুমের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
 
অভিযোগ রয়েছে, কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছে বাপেক্স। পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে গ্যাস কিনতেই বেশি আগ্রহী। বাপেক্সের একজন সাবেক এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস কেনা হচ্ছে প্রায় ৩ ডলার মূল্য দিয়ে। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ হাজার মিলিয়ন ডলার।
 
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। শ্রীকাইল থেকে যাতে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করা যায় সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
‌‌এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।