ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

তাহলে দাম বাড়ানোর সুর কেন?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
তাহলে দাম বাড়ানোর সুর কেন?

ঢাকা: কোম্পানি লাভে না-কি লোকসানে? লাভে রয়েছে। গত বছর প্রফিট বোনাস পেয়েছেন কতো? দেড় লাখ টাকা।

তাহলে দাম বাড়ানোর সুর ধরেছেন কেন? এবার থেমে যান উত্তরদাতা।

বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এভাবেই প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। চলমান গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির তৃতীয় দিনে বাখরাবাদ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করছেন বিইআরসি’র বিইআরসি’র চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, রহমান মুরশেদ ও মাকসুদুল হক

বাখরাবাদ তিতাস গ্যাসের মতো একই হারে তাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিটি গড়ে ৪০ শতাংশ (৫.২৪ থেকে ১২২.২২ শতাংশ) বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

কোম্পানিটির প্রস্তাবে জানানো হয়, তারা গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) তারা মুনাফা করেছে ১৩৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। মুনাফায় থাকায় কর্মচারীরা প্রত্যেকে প্রফিট বোনাস পেয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রয়েছে ৬২৯ কোটি টাকা।

বাখরাবাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এতোদিন গ্যাসের কোনো পণ্যমূল্য ছিল না। সরকার প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের পণ্যমূল্য নির্ধারণ করেছে ২৫ টাকা। যে কারণে দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, এতোদিন যে ৫৫ শতাংশ হারে শুল্ক-ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছি, সেগুলো তাহলে কি? এগুলো তাহলে কেন দিলাম?

শামসুল আলম বলেন, ২০০৩ সালে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণের ফর্মুলা দিয়েছে সরকার। তাতে বলা হয়েছে, গ্যাসের ক্রয়/উৎপাদন মূল্য+ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়+ সম্পুরক শুল্ক+মুল্য সংযোজন কর= ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য। এ ফর্মুলা বলবত রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্যাসের ক্রয়/ উৎপাদন মূল্য, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়, সম্পুরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাড়েনি বা বাড়ানোর প্রস্তাবনা নেই সরকারের। সে কারণে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাবের আইনগত ভিত্তি নেই। আইনগতভাবে এ প্রস্তাব গণশুনানির অনুপোযুক্ত।

আবেদনগুলো খারিজ করার প্রস্তাব করেন অধ্যাপক শামসুল আলম।
 
গত সোমবার (২ ফেব্রুয়ারি) গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) এর প্রস্তাবের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হয়। মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের(পিজিসিএল)প্রস্তাবের উপর শুনানি করা হয়। গ্যাসের পণ্যমূল্য (প্রস্তাবিত প্রতি হাজার ঘনফুট ২৫ টাকা) নির্ধারণ করা হলে পিজিসিএল’র ৫.৫৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে তিতাসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘দাম বাড়ালে সরকার বিপদে পড়বে। দয়া করে সরকারকে বিপদে ফেলবেন না’।

কোম্পানিগুলো সকলেই অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। তারা আবাসিকে (এক চুলা) ৪শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা, দুই চুলা ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খাতে প্রতি হাজার ঘন মিটার গ্যাসের বর্তমান দর ৭৯.৮২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮৪ টাকা, সার উৎপাদনে ৭২.৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮.২৬ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, বাণিজ্যিকে ২৬৮.০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, চা বাগানে ১৬৫.৯১ থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, সিএনজিতে ৮৪৯.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ১৩২.৬৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে ভেতরে বিইআরসি কার্যালয়ে যখন গণশুনানি চলছে, ঠিক ভবনের বাইরে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা,  সিপিবি ও বাসদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে।

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বেআইনিভাবে উত্থাপিত গ্যাসের সম্পদমূল্য ২৫ টাকার বিষয়ে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এ গণশুনানি অর্থবহ হবে না। সুতরাং আগে সম্পদমূল্যের বিষয়ে সুরাহা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, ০৪ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১৫

** ‘তাহলে সরকার বিপদে পড়বে’
** আবাসিকে গ্যাসের দাম ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
** পেট্রোবাংলা আতঙ্কিত !
** গ্যাসের হুইলিং চার্জ ৪৭ পয়সা করার প্রস্তাব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।