ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ভাড়ায় বসছে এলএনজি টার্মিনাল

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৪
ভাড়ায় বসছে এলএনজি টার্মিনাল ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: চলতি সপ্তাহে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠছে মহেশখালী এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালের দর প্রস্তাব। এতে প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির হুইলিং চার্জ ধরা হয়েছে দশমিক ৪৯ ডলার।



ভাসমান এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পাচ্ছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি এসট্রা অয়েল অ্যান্ড এনার্জি কসোর্টিয়াম (এইসি)। কোম্পানিটি ১৫ বছর টার্মিনাল পরিচালনার পর পেট্রোবাংলার কাছে মালিকানা হস্তান্তর করবে।

বৈরী আবহাওয়া অথবা বাংলাদেশ সরকার এলএনজি নিতে ব্যর্থ হলেও কোম্পানিটি নির্দিষ্ট হারে ভাড়া দাবি করেছে। এ বিষয়ে ‘নেট ওসান স্ট্যাডি’ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভাসমান এ টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসে রূপান্তরিত করে পাইপলাইনের মাধ্যমে স্থলভাগে আনা হবে।

এলএনজি আসবে কাতার থেকে। এ জন্য ২০১১ সালে কাতারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও সই করা হয়েছে। এতে দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহে সম্মতি দিয়েছে কাতার। এলএনজি আমদানির লক্ষ্য ধরা হয়েছেবছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন মে. টন।

শিপিংসহ প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম পড়বে প্রায় ১৪ ডলার। টার্মিনালের হুইলিং চার্জ .৪৯ ডলারের। এর সঙ্গে যুক্ত হবে মহেশখালী-আনোয়ারা পাইপ লাইনের হুইলিং চার্জ। সবমিলিয়ে প্রতি হাজার ঘনফুটের ম‍ূল্য ১৭ দশমিক ১০ ডলারের গিয়ে ঠেকবে বলে মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতি লিটার ডিজেলের আমদানি মূল্য ৭৪ টাকা ধরলে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৬ টাকা ১৩ পয়সা।

আমদানি করা এলএনজিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ব্যয় হবে ৯ টাকা ৪০ পয়সা। এলএনজি ৫শ’ দেশের ২ হাজার ৩শ’ গ্যাস মিশ্রিত করলে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের ম‍ূল্য দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৩৯ ডলার। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৪ টাকা ৩৭ পয়সা হবে বলে মনে করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় গেলে অনেক বিলম্ব হতে পারে। তাই বিশেষ আইনের আওতায় আলোচনার মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি আরও জানান, কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি মার্কেটে আসবে। তখন এলএনজির দাম কমে যাবে। তবে তেল আমদানির চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কত দামে এলএনজি কিনছি সেটাই বড় কথা। কাতার থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আনা যায় কি-না সে বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নতুন বড় গ্যাসক্ষত্রে না পেলে ২০২০ সালের পর গ্যাস সঙ্কট দেখা দেবে। ভবিষ্যতে দেশে জ্বালানি সঙ্কটে না পড়ে এ জন্যই বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহার করতে চায় সরকার।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে এলএনজি টার্মিনালের জন্য আগ্রহপত্র (ইওআই) চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে ১০টি আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র জমা দেয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে আগ্রহী ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে চারটিকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। মাস্টারপ্ল্যানে ২০১২ সালের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছিলো।

এলএনজি গ্যাস রূপান্তর করে চট্টগ্রামে আনার জন্য ৯১ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) মহেশখালী থেকে আনোয়ারায় সরবরাহ লাইন স্থাপন করবে। পাইপ সরবরাহের জন্য ভারতীয় মান কোম্পানির ৩ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ ডলার দরপ্রস্তাব প্রাথমকিভাবে মনোনীত করা হয়েছে।

সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, গ্যাস ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সাল থেকে লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘাটতি মোকাবেলা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে ১৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হতো। সে সময় ঘাটতি ছিল ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে দেশের গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা বেড়ে ২৩শ’ এমএমসিএফডি হয়েছে।

এরপরও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে ৬শ’ এমএমসিএফডি। চাহিদা বেড়েই চলেছে। এছাড়া অনেকে ফিল্ডে গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। এজন্য ভবিষ্যতে গ্যাসের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে আমদানি করা তরল গ্যাস বা এলএনজির কথা বিবেচনা করা হয়। জাপান, কোরিয়া, ভারতসহ অনেক দেশেই এলএনজি ব্যবহার করছে।

দ্রুততম সময়ে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১০ সালে একটি এলএনজি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পাওয়ার সেক্টর ডেভেলপমেন্ট টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স (পিএসডিটিএ) এর আওতায় অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়।

এলএনজি কার্গোর জন্য সমুদ্রে ১২ থেকে ১৫ মিটার গভীরতা দরকার, যা মহেশখালী অঞ্চলে সম্ভব। এসব অবস্থায় মহেশখালীতে এ টার্মিনাল স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়।

২৬ জুন ২০১৪ পেট্রোবাংলা ও এইসির মধ্যে চুক্তিটি অনুস্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হবে। চুক্তি অনুযায়ী পেট্রোবাংলাকে টেক অব পে ভিত্তিতে বিভিন্ন চার্জের জন্য ফিস দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।