ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের বিশাল মজুদ!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৪
বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের বিশাল মজুদ! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের বিশাল মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি জলসীমায় প্রায় ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আশা করা হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।


 
গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ‍ানকারী বিদেশি কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার তিনি এ-তথ্য জানান।

তবে এখান থেকে গ্যাস পেতে ৯ বছর সময় লাগতে পারে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
কনোকো ফিলিপস গভীর সমুদ্রে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে দ্বি-মাত্রিক জরিপের মাধ্যমে এই বিশাল মজুদের বিষয়ে অবগত হয়েছে। কনোকো-ফিলিপসের প্রতিনিধি দল দেখা করে প্রতিমন্ত্রীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 
জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার যখন বিদেশ থেকে উচ্চদরে গ্যাস, এলএনজি আমদানির চিন্তা করছে সে সময়ে এ ধরনের একটি খরব স্বস্তিদায়ক ও খুশির বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
 
কনোকোর রিপোর্ট সত্যি হলে বাংলাদেশের জন্য তা বিশাল সুখবর হবে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এই সময়ে এর চেয়ে বড় কোনো সুখবর হতেই পারে না।
 
বাংলাদেশে স্থলভাগে আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে মোট মজুদ রয়েছে মাত্র ১৩ টিসিএফ। আবিষ্কৃত ২৬টি ক্ষেত্রের গ্যাস আগামী ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর সমুদ্রে দু’টি ব্লকেই তার অর্ধেকের বেশি পরিমাণ মজুদ আছে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৯৫৫ সালে বাংলাদেশের হরিপুরে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়। প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৬১ সালে ছাতক সিমেন্ট কারথানায়। ১৯৬৮ সালে গ্যাস দিয়ে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে। আর আবাসিকে প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৬৮ সালে ঢাকায়।

বর্তমান সরকারের সময়ে (২০০৯ সাল থেকে) এর আগে ৪টি গ্যাসক্ষেত্র ও পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রে ৭টি নতুন স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সংকট পিছু ছাড়ছে না। রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। দিনের বেলা ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন।

প্রতিমন্ত্রী জানান, কনোকো গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করেছে। তারা প্রস্তাব দিয়েছে উৎপাদন শুরুর পরবর্তী বছর থেকে প্রতি বছর ২ শতাংশ হারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর। কোম্পানিটি বিদেশি কোম্পানিকে মিয়ানমার গ্যাসের যে দর দিচ্ছে সেই  দর দেওয়ারও প্রস্তাব তুলেছে।

বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ৪ দশমিক ২ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাত ডলার করা হচ্ছে। প্রতি বছরে এ দাম থেকে ২ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্র থেকে এ গ্যাস স্থলভাগে আনতে হলে বাংলাদেশকে ২৮০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে।

মিয়ানমারের গভীর সমুদ্রের গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদেশি কোম্পানি আইওসি গ্যাস তুলছে। সেই গ্যাস প্রতি হাজার ঘনফুট সাত ডলারে কিনছে মিয়ানমার। সমুদ্র থেকে পাইপ লাইন নির্মাণ করে স্থলভাগে গ্যাস আনার খরচও মিয়ানমার সরকারই দিয়ে থাকে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দাম বাড়ানো হলেও কনোকো থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করায় গ্যাসের দাম গড়ে ৫ ডলারের বেশি পড়বে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ১৪ থেকে ১৬ ডলার দামে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস বিদেশ থেকে আনতে যাচ্ছি যা এলএনজি নামে পরিচিত। এ দামের চেয়ে নিশ্চয় ৫ ডলার কমই হবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের অবস্থান। ২০১১ সালের ১৬ জুনে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে তেল-গ্যাস  উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) করা হয়। ২০০৯-এর ২৪ আগস্ট মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয় চুক্তিটি। এর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০০৮-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি।

কনোকোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, উত্তোলিত গ্যাসের ৫৫ শতাংশ অনুসন্ধানের জন্য বিনিয়োগ করা অর্থ উঠিয়ে নেবে কনোকো-ফিলিপস। বাকি ৪৫ শতাংশ গ্যাস থেকে বাংলাদেশ সরকার পাবে ৫৫ শতাংশ আর কনোকো-ফিলিপস ৪৫ শতাংশ। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের সঙ্গে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ সম্ভাব্য খনি থেকে যদি প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয় তাহলে বাংলাদেশ সরকার পাবে ৮০ শতাংশ।

আর যদি তেল পাওয়া যায় তাহলে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার পাবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর দামের ক্ষেত্রে, এশিয়া-প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম ইনডেক্স (এপিপিআই) অনুযায়ী বাজার দর নির্ধারণ করা হবে। তবে প্রতি টন ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ ডলারের উর্ধ্বে কোনো অবস্থাতেই উঠতে পারবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে।

চুক্তিতে প্রথম ধাপে পাঁচ বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে যদি কনোকো ফিলিপস সাফল্য অর্জন করতে পারে সেক্ষেত্রে পরবর্তী দুই ধাপে (দুই বছর করে মোট চার বছর) সময় বর্ধিত করা যেতে পারে প্রস্তাব করা হয়েছে।

পাঁচ বছরের প্রথম ধাপকে আবার দুই ভাগে (উপ-ধাপ) বিভক্ত করা হয়েছে। এর প্রথম উপ-ধাপে (তিন বছর) তারা গভীর সমুদ্রে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাইচমিট সার্ভে করবে। দ্বিতীয় উপধাপে (দুই বছর) কমপক্ষে একটি কূপ খনন করে তাদের সফলতা দেখাতে হবে। এরপরই কেবল তারা পরবর্তী দুই ধাপের জন্য বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।