ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন শিগগিরই

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৪
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন শিগগিরই ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা:  ৪০ হাজার ৩২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ী আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে
যাচ্ছে সরকার। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট।

৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পূর্ণ দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতি টন কয়লার দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সা। বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে আমদানিকৃত কয়লার উপর নির্ভরশীল। প্রকল্প এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে চট্রগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়ন।

২টি বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রে কুলিং এবং স্টিম জেনারেশনের জন্য সমুদ্রের সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭০০ কেজি স্ট্যান্ডার্ডের প্রয়োজনীয় পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে ১৮ জুন বিদ্যুৎ বিভাগ প্রস্তাবিত ‘মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড  পাওয়ার প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের উপর  প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও শক্তি)  এস এম গোলাম ফারুক সভাপতিত্ব করবেন।

প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প  ও শক্তি)  এস এম গোলাম ফারুক বাংলানিউজকে জানান, ১৮ জুন প্রকল্পের উপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্পের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এর পরেই প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠানো হবে।

প্রকল্পটিতে অন্যতম সহজ শর্তে ঋণ প্রদানকারী সংস্থা  জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি  (জাইকা)। ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার এবং জাইকার মধ্যে ১২০ মিলিয়ন জাপানি ইয়েনের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ অর্থের একটি অংশ মূলত মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পটির উদ্যোগ নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল)।

সিপিজিসিএল এর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, পিইসি সভার জন্য প্রকল্পটির সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগরিই একনেক সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৪০ হাজার ৩২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৭ হাজার ৩৩৮ কোটি ৬ লাখ,  পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) থেকে ৩ হাজার ৯৯৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং জাইকা দেবে ২৮ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় কোনো বরাদ্দ ছিল না। তবে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া এই অর্থবছরে ২১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩৭৩টি আবাসিক ইউনিট নির্মাণে ১৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা সরকারি খাত থেকে ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে বিদ্যুতের ভবিষ্যত চাহিদা পূরণ এবং পাওয়ার সিস্টেমের গুণগতমান উন্নীতকরণ, স্থায়ীত্ব নিশ্চিতকরণ, লোডশেডিং হ্রাসকরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

সরকার মাতারবাড়ীতে ৬০০ মেগাওয়াট করে ২টি ইউনিটে মোট ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম।

প্রকল্পের আওতায় দুইটি ইউনিটে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২টি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন যা স্থাপিত হবে নদীর ধারে ইনটেক ও ডিসচার্জ পাইপ সরবরাহের জন্য।

এছাড়া ২৭৫ মিটার উচ্চতার দুইটি স্টেক, আবাসিক এবং সামাজিক এলাকা গঠন, পানি শোধন ব্যবস্থা, সাব-স্টেশন, জেটি কয়লা সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, এ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন নির্মাণ করা হবে।

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল
টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। মোট কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা হবে ৪১ দশমিক ২৯ ভাগ, যা কিনা বাংলাদেশের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মদক্ষতা থেকে ৩৪ ভাগ
বেশি।

অপরদিকে আমেরিকার কর্মদক্ষতা মাত্র ৩৬ ভাগ। বেশি কর্মদক্ষতার টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে কয়লার পরিমাণ কম লাগবে এবং কম কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হবে।

বিভিন্ন ধরনের উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে বায়ু দূষণ কম হবে এবং আন্তর্জাতিক লিমিটেডের মধ্যে থাকবে। নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ রোধ করার জন্য লো রেট বার্নার মেথড ব্যবহার করা হবে। এ্যাশ রোধ বা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে ইলেকট্রোস্টেটিক ব্যবহার করা হবে বলে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল  (ডিপিপি) এ উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রম: পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, জেটি ও চ্যানেল নির্মাণ, পাওয়ার প্ল্যান্ট বয়লার স্থাপন, পাওয়ার প্ল্যান্ট টারবাইন এবং জেনারেটর স্থাপন, ২ দশমিক ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।

প্রকল্পের অনূকুলে ১ হাজার ৩৪১ জন স্থানীয় পরামর্শক এবং ১ হাজার ৪২  জন বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আবাসিক ভবন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ নির্মাণ, মসজিদনির্মাণ, শপিং সেন্টার, হাসপাতাল, ক্লাব, ডরমেটরি, ব্রাক, রেস্ট হাউজ, পুকুর, লেক ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হবে।

এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৭১ লাখ। প্রকল্পের আওতায় ৪০টি যানবাহন কেনা হবে। এর মধ্যে মোটর সাইকেল ১৬টি, এম্বুলেন্স ১টি, জিপ ৯টি, স্পিড বোড ২টি, মাইক্রোবাস ২টি ও ৯টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হবে।

এই খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ২১১ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।