ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

মানি লন্ডারিংয়ের শঙ্কা

বেসরকারি খাতে তেল আমদানি!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪
বেসরকারি খাতে তেল আমদানি!

ঢাকা: ফার্নেস অয়েল আমদানির ক্ষমতা কুইক রেন্টাল মালিকের হাতে তুলে দিতে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। জ্বালানি বিভাগ এতে জোর আপত্তি জানিয়ে এলেও তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।


 
সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, কুইক রেন্টাল মালিকদের তেল আমদানি করার সুযোগ দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন(বিপিসি)। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, কুইক রেন্টাল মালিকরা তেল আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করেন, তাহলে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। এমনকি তেলের দাম বেশি দেখিয়েও টাকা পাচার করার শঙ্কা রয়েছে।
 
মানি লন্ডারিং প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, মানি লন্ডারিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিআর মনিটরিং করবে।
 
বিপিডিবি’র দাবি হচ্ছে, প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের জন্য বিপিসিকে দিতে হয় ৬০.৯৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে আমদানি করলে প্রতি লিটারের বিল দিতে হয় ৫৪.৭৮ টাকা। এছাড়া বিপিসি বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তেলের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
 
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিপিসি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেল সরবরাহ করতে সক্ষম। আর দামের তারতম্য হওয়ার কারণ হচ্ছে বিপিসিকে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল আমদানির জন্য ডিউটি/ভ্যাট দিতে হয় ৭ টাকা।
 
কিন্তু বেসরকারি খাতে আমদানিকারকদের ভ্যাট দিতে হয় না। এমনকি সার্ভিস চার্জ বাবদ ৯ শতাংশ অতিরিক্ত বিল পায় বেসরকারি আমদানিকারকরা। কিন্তু বিপিসি কোনো সার্ভিস চার্জ পায় না।
 
বিপিসির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এর আগেও ৬টি কোম্পানিকে তেল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সামিট গ্রুপের মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াটের জন্য ৯০ হাজার মেট্রিক টন, খুলনা ১১০ মেগাওয়াটের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ও খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।
 
সামিটের বাইরে বারাকা পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াটের জন্য ৫ হাজার ১২০ মেট্রিক টন, জুলদা ১০০ মেগাওয়াটের জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২৮ হাজার মেট্রিক টন তেল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
 
নতুন করে আরও ৬টি কোম্পানি সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানির আবেদন করেছে। এগুলো হচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, গগণনগর ১০২ মেগাওয়াট, পটিয়া ১০৮ মেগাওয়াট, বারাকা পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াট ও জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
 
বেসরকারি খাতের এই মালিকদের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছে বিপিডিবি। তেল আমদানির অনুমোদন দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এ কাজে সক্রিয় রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। তাদের চাপের মুখে বিপিসি আবেদিত চাহিদার ৫০ শতাংশ অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ দিয়েছে।
 
মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একটি নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
 
বিপিসি’র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিপিসি বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহ করতে সক্ষম। আইন অনুযায়ী বিপিসি ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের তেল আমদানি করার সুযোগ নেই। আমি সে কথাই বলেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে জ্বালানি বিভাগ।
 
তিনি বলেন, ২০১০ সালে হঠাৎ তেলের চাহিদা বেড়ে গেলে বিপিসি কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলো। বিপিসি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন বেসরকারি খাতে তেল আমদানির কোনো যুক্তি নেই। এতে বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।