ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎখাতে সিস্টেম লস কমবে আড়াই ভাগ

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৪
বিদ্যুৎখাতে সিস্টেম লস কমবে আড়াই ভাগ

ঢাকা: দেশের বিদুৎখাতে সিস্টেম লস কমাতে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। তাদের সহায়তায় নেওয়া কার্যক্রম করা গেলে এ খাতে সিস্টেম লস কমবে কমপক্ষে আড়াই ভাগ।



২০১২-১৩ অর্থবছরের বিদ্যুৎ খাতে সামগ্রিক (সঞ্চালন ও বিতরণ) সিস্টেম লসের হার ছিল ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের হার ছিল ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। দশম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই এই সিস্টেম লস কমানোর জন্য উদ্দোগ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে ‘আপ-গ্রেডিং অব রুরাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম” এবং ইনহ্যান্সমেন্ট অব ক্যাপাসিটি অব গ্রিড সাব-স্টেশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন লাইন(ফেইজ-১) প্রকল্পে পৃথক পৃথকভাবে ৪ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে সরকারের এই প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে ২ দশমিক ৫ ভাগ সিস্টেম লস হ্রাস পাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবিত ‘আপ-গ্রেডিং অব রুরাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম”প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগ উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কে(পবিবো)। আর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ০১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১১ কোটি ৭০ হাজার টাকা। এতে বিশ্বব্যাংক ব্যয় করবে ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা এবং সরকার ব্যয় করবে ১ হাজার ৩০৬ কোটি ৭০ হাজার টাকা।

চলতি অর্থবছরের ২০ জানুয়ারি প্রকল্প দুটির উপরে শের বাংলানগর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মু্ল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের (শিল্প ও শক্তি) হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।

হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন দেশের বিদ্যুতখাতে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
 
তিনি বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সমতা রক্ষার বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। এই বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে (পবিস) ক্রয় মূল্যের তুলনায় বেশি দাবে বিদ্যুৎ বিক্রয়ের কারণে উদ্ভূত লোকসান যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও অ্যাকাউন্টে প্রদর্শনের নির্দেশনা দেন। এছাড়া পনগর্ঠিত ডিপিপিতে পবিবোর পবিস সমূহের বর্তমান আর্থিক কার্যকারিতা, সাসটেইনএ্যাবিলিটি প্ল্যান এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে(আরইবি) অবদান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। সভাপতি জানান, প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের ফলে সিস্টেম লস আড়াই ভাগ কমে আসবে।

প্রকল্পের অর্থায়ন প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, শিগগিরই অর্থায়নের বিষয়ে ইআরডি’তে আন্ত:মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে লোন নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হবে। তারপর বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদিত হবে। সরকারি অর্খায়ন প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি জানান, এ বছর সরকারি অর্থায়ন প্রয়োজন হবে না। তবে আগামী বছর প্রয়োজনীয় অর্থ মেটান হবে। ‍

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য: ঢাকা,   চট্রগ্রাম সিলেট বিভাগে ৩৭টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির বিদ্যুত বিতরণ নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি ১ হাজার ৮৪০ এমভিএ বাড়ানোর মাধ্যমে বর্ধিত বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো। নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা। ৩৭টি পবিসির পরিকল্পনা ও আর্থিক কার্যকারিতা উন্নতিকরণ।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে  জানান, বর্তমানে ৭০টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় ২ লাখ ৪৮ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ ও ৪৭৭টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। চলমান প্রকল্পসমূহের আওতায় আরও ২৫ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুত সুবিধা প্রদান করা হবে। কিন্তু, বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহক সংযোগ বৃদ্ধিতে সামগ্রিক লোড বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং উপকেন্দ্রসমূহ হতে বিতরণ দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় গ্রাহক প্রান্তে লো-ভোল্টেজ সমস্যা সৃষ্টি ও সিস্টেম লস বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা পল্লী বিদ্যুত সমিতিগুলোর জন্য আর্থিকভাবে লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিদ্যুৎ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি বেশ পুরাতন হওয়ায় ঘনঘন বিদ্যুত বিভ্রাটসহ গ্রাহক অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল সমস্যা উত্তরণের জন্য প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন জরুরি। ’

পবিবোর মোট গ্রাহকের মধ্যে আবাসিক ও কৃষি গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৯০ ভাগ এবং শিল্প গ্রাহকের সংখ্যা মাত্র ১০ ভাগ। বর্তমানে পবিবো প্রতি ইউনিট ৫ দশমিক ৯২ টাকা দরে ক্রয় করে অন্যদিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ মাত্র ৩ দশমিক ৮৫ টাকা দরে গ্রাহকের নিটক বিক্রয় করে থাকে। এছাড়া, প্রতি কিলোমিটার বিতরণ লাইনের বিপরীতে গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৪০ জন।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ইনহ্যান্সমেন্ট অব ক্যাপাসিটি অব গ্রিড সাব-স্টেশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন লাইন (ফেইজ-১) প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হবে।
এতে  মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেবে  ৯২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে ২৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাকি ১৫৯ কোটি টাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) মেটাবে। প্রকল্পটি বাস্তয়ন করা হবে জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল নাগাদ।

এই প্রকল্পের আওতায় ২৩০/১৩২ কেভি ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং ১৩২/৩৩ কেভি ৮৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি ঢাকা, সিলেট ও চট্রগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি ‍অন্যান্য এলাকাতেও বাস্তবায়িত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এর সর্বশেষ