ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

পেট্রোবাংলার প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপ

বাপেক্সের সম্পদ দেওয়া হচ্ছে এসজিসিকে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১২
বাপেক্সের সম্পদ দেওয়া হচ্ছে এসজিসিকে!

ঢাকা: বাপেক্সের সম্পদ সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির (এসজিসি) হাতে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পেট্রোবাংলা। বাপেক্সকে দুর্বল করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই শাহবাজপুর সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন সুন্দরবনকে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।



নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাপেক্সের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, সরকার  যে মুহূর্তে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার ও এর পরিধি বাড়ানোর কথা বলছে, সে সময়ে পেট্রোবাংলার প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপ দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে দিচ্ছে বাপেক্সকে।

 ওই সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনটি বাপেক্সের লাভজনক সম্পদ। অথচ এটিকে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির হাতে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পেট্রোবাংলার কিছু কর্মকর্তা। বাপেক্স আপত্তি জানালেও পেট্রোবাংলা তা কানে নিতে চাচ্ছে না বলে বাপেক্স সূত্র দাবি করেছে।

 এই প্রকল্পটি থেকে বাপেক্স মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো আয় করে আসছিলো। এ থেকে প্রতিমাসে ভ্যাট  ও ট্যাক্স বাবদ কোটি টাকার মতো সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে আসছে।

সফলভাবে চলতে থাকা এই প্রকল্পটি নিয়ে গত ৭ মাস আগে ষড়যন্ত্র শুরু করে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলা এই প্রকল্পের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

তখন বাপেক্স বিষয়টিতে আপত্তি জানায়। এরপরেও সম্প্রতি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ওই সম্পদ তুলে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে পেট্রোবাংলা।

ওই চিঠি পাওয়ার পর বাপেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা দাবি করেছে, এভাবে তিলে তিলে বাপেক্সকে দুর্বল করার কোনো মানে হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাপেক্সের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গ্যাস সেক্টরে সরাসরি কাজ করছে একমাত্র বাপেক্স। অন্য কোম্পানিগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে থাকে।

ওই কর্মকর্তা জানান বাপেক্সের কাজের পরিধি কম থাকায় বিগত বছরে তারা ডব্লিউপিএফ ( ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড) থেকে তারা প্রত্যেকে মাত্র ৩৮ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। অথচ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় ৬ লাখ টাকা করে পেয়েছেন।

বাপেক্স মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এক কর্মকতা দাবি করেছেন, লাভজনক এই প্রকল্পটি সুন্দরবন কোম্পানিকে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এর একটি মাত্র অর্থ হতে পারে তা হলো বাপেক্সকে দুর্বল করে দেওয়া। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর হাত থাকতে পারে।

বাপেক্সের উৎপাদন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা রয়েছে যারা চায় না বাপেক্স শক্তিশালী হোক। কারণ বাপেক্স শক্তিশালী হলে তারা বিদেশি কোম্পানির হাতে গ্যাস ব্লক তুলে দিতে পারবে না। আর গ্যাস ব্লক তুলে দিতে না পারলে তাদের বাড়ি গাড়ি হবে না।

১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে দেশিয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। এখানে প্রায় ১ টিসিএফ ( ট্রিলিয়ন কিউবিক ঘনফুট ) গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে।

ক্রেতা ও প্রসেস প্লান্ট না থাকায় এই গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে পারেনি বাপেক্স। ২০০১ সালে শাহবাজপুর মূল্যায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি উন্নয়ন কূপ ও একটি ওয়ার্ক ওভার কূপ ও ৩৩ কিলোমিটার সঞ্চালন ও ২০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়।

বিকল্পভাবে গ্যাস প্রসেসিং সিসটেম বসায় বাপেক্স।

ক্রেতা তৈরির জন্য বাপেক্স রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর জন্য তার নিজস্ব জমি ভাড়া দেয়। সেখানে বসানো হয় ৩৪.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০০৯ সালের মে মাসে উৎপাদনে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। গ্যাস বিক্রি ও সঞ্চালন থেকে মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

বর্তমানে ক্রেতা না থাকায় দৈনিক ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উ‍ৎপাদন করা হচ্ছে। এখান থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব বলে বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে।

এই সঞ্চালন লাইনটি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, সুন্দরবন নতুন কোম্পানি এখন ঋণের মাধ্যমে ব্যয় পরিচালনা করছে। এ জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে দেওয়া  হচ্ছে।

কৌশলে বাপেক্সকে দুর্বল করা হচ্ছে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, বাপেক্সের দুর্বল হওয়া বা দুর্বল করার অভিযোগ সত্য নয়। শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডতো বাপেক্সেরই থাকছে। শুধু বিতরণ অংশটুকু সুন্দরবনকে দেওয়া হচ্ছে। বাপেক্স উ‍ৎপাদনের মার্জিন ঠিকই পাবে।

এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনা ছাড়াই সফল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বাপেক্স। বাপেক্স যে কূপ ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকায় খনন করতে সক্ষম সেই কূপ খননের কাজ রাশিয়ান কোম্পানি গাজপ্রমকে ২০০ কোটি টাকায় দেওয়া হয়েছে।

বাপেক্সের এ ধরনের ৫টি কূপ খনন করবে গাজপ্রম। এতে করে করে বাপেক্সের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বাড়বে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সেই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নেওয়া এই টাকার সুদও শোধ করতে হবে বাপেক্সকে। এতে করে বাপেক্স বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বে বলেও মনে করছেন বাপেক্স কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময় : ১০৪৬ ঘণ্টা, ০৭ আগস্ট, ২০১২
ইএস/এআর/সম্পাদনা : নজরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।