ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ খাতকে খুন করা হয়েছে: বিডি রহমতউল্লা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১২

ঢাকা: বিদ্যুৎ খাতকে খুন করা হয়েছে। এখন দাফন করার ব্যবস্থা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লা।

দাফনের আগে তিনি খুনিদের বিচার দাবি করেন। আর আনু মুহাম্মদ দাবি করেছেন,  সরকারে দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে ভর্তুকির বোঝা বেড়েছে।

মঙ্গলবার মুক্তি ভবনে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘দেশি বিদেশি লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা চলবে না’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ১০ শতাংশ কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সমান ভর্তুকি  যাচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ উন্নয়নের পথনকশা দেখালেও চলছে অঘোষিত পথনকশায়।   সেই পথ নকশা হচ্ছে বৃহৎ ব্যক্তি মালিকানা ও বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বিদ্যুৎ খাতকে তুলে দেওয়া।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানিকে প্রহসন উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যে ভাবে চায়, তারা সেভাবেই দাম বাড়ায়। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

কুইক রেন্টাল না বসিয়ে পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হলে স্বল্প মেয়াদে ২৫০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো। আর সেটি করা হলে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না বলে দাবি করেন তিনি।

কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গ্যাস খাত বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হলে গ্যাস সংকটের দোহাই দিয়ে কুইক রেন্টাল করতে পারতো না সরকার।

বিবিয়ানার গ্যাস পাচার হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে, এখানে রিপোর্ট করতে গিয়ে মেহেরুন রুনি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডে বিবিয়ানার বিষয়টির যোগসূত্র থাকতে পারে। সরকার ও বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করার আহ্বান জানান আনু মুহম্মদ।

বিডি রহমতউল্লা বলেন, একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রই যথেষ্ট। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে তো কুইক রেন্টালের কথা ছিলো না? আজকে কেন, কুইক রেন্টাল বসিয়ে বিদ্যুৎ খাতকে খুন করা হলো?’’

তিনি বলেন, মূলত বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা সেক্টর তুলে দিতেই তারা সংকট জিইয়ে রেখেছে।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে ৩৫ শতাংশ।

আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। ভর্তুকির বোঝাও বাড়ছে। সে কারণে আজ দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়েছে।

প্রকৌশলী ম. এনামুল হক বলেন, বিদ্যুৎ খাত ধ্বংসের জন্য তৌফিক-ই-ইলাহীর নাম এসেছে। সেই সঙ্গে সামিট ও ওরিয়ন গ্রুপের নাম এসেছে। এদের মুখোশ উন্মোচন করতে কঠোর আন্দোলন করতে হবে।

প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যতোটা আগ্রহী, তার সামান্য পরিমাণে যদি কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হতো তা হলে এ জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র না বাড়িয়ে পুরোনো (সিম্পল সাইকেল) কেন্দ্রগুলো কম্বাইন্ড সাইকেলে নেওয়া গেলে এ বোঝা চাপতো না।

তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিলো, ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব কমিয়ে আনা। কিন্তু তাদের পরিকল্পনায় ২০১৬ সালে ১৩ হাজার ১৫৪ মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৯১৯ মেগাওয়াট সরকারি, বাকি ৭২৩৫ মেগাওয়াট বেসরকারি খাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব হাসান মুন্না। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।