ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ

ভয়কে জয় করে নেতাকর্মীদের যুদ্ধে নামতে হবে: খসরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
ভয়কে জয় করে নেতাকর্মীদের যুদ্ধে নামতে হবে: খসরু

সিলেট: উচ্ছৃঙ্খল সরকারকে হঠাতে সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনীর প্রয়োজন আছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আর খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে বাংলাদেশ মুক্ত হবে না।

তিনি বলেন, নেত্রীকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রকে রক্ষায়, দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে, দেশের মানুষকে মালিকানা ফিরিয়ে দিতে ভয়কে জয় করে নেতাকর্মীদের যুদ্ধে নামতে হবে।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে সিলেট বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইনের দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা থেকে বিরত রাখছেন। আইন হলো সাংবিধানিকভাবে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। আর তারা প্রয়োগ করছেন মানুষকে হত্যা করতে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সুপরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা আইন দেখাচ্ছেন, উনি নাকি মুক্ত। তাহলে তিনিতো বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারতেন। একটা মানুষকে আইনের ধারা দেখিয়ে হত্যা করার মতো আর বড় বোঝা আর কিছু হতে পারে না। এই বোঝা বইতে হবে শেখ হাসিনাকে।  

সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রিয় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে শরিক হওয়ার অংশ হিসেবে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় মুরব্বী ও গৃহিনীদের দোয়া করা ও রোজা রাখার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে বাংলাদেশ মুক্ত হবে না। বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমেও সমস্যা সমাধান হবে না সত্যি। তাই আমরা কেউ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি না- এই মানসিকতা নিয়ে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিন। এই বিভাগীয় সমাবেশের পরে প্রতিদিন কর্মসূচি থাকবে। যতক্ষণ মানুষ দেশের মালিকানা ফিরে না পায়, খালেদা জিয়া মুক্ত না হন; ততদিন আন্দোলন বন্ধ হবে না। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। এই আন্দোলনে ঘরে ঘরে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। খালেদা জিয়ার জন্য উপবাস করতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা আইনের কথা বলে খালেদা জিয়াসহ এ দেশের মানুষকে খুনের লাইসেন্স সৃষ্টি করেছে। বহু খুন, গুম ও লোককে জেলে দিয়েছে। এখন তাদের টার্গেট হচ্ছে খালেদা জিয়া। তারা বিএনপিকে ধ্বংস করে ভোট চুরির মাধ্যমে অবৈধভাবে আবারও ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে।

তিনি বলেন, আমাদের আগামী দিনের সংগ্রাম হবে খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রাম। ওনার চিকিৎসা না হলে দেশের জনগণের চিকিৎসা হবে না। উনি মুক্ত না হলে বাংলার মানুষ মুক্ত হবে না। তাই আন্দোলনের ধারাকে এগিয়ে নিতে আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে।  

বেলা আড়াইটায় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে এ সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত বিদেশ পাঠানোর দাবি জানানো হয়। এই দাবি না মানলে ঢাকা অচল করে দেওয়ার মতো কর্মসূচি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি দাবি জানান বক্তারা।

সমাবেশ শুরুর পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘আপনারা বিভাগে বিভাগে সমাবেশ না ডেকে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকেন। আমরা ঢাকা অচল করে দেব। নয় মাস লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। মাসখানেক লড়াই করতে পারলেই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব। ’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আইনি বাধা নয়, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সবচেয়ে বড় বাধা শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে। না হলে দেশ ও খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না। ’

জাতীয় কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, ‘লিভার সিরোসিস সাধারণত পুরুষ মানুষের হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। তবে সরকার কী তাকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছে? বিদেশে চিকিৎসায় গেলে এসব ধরা পড়বে। তাই সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। ’

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এনামুল হক, তাহসীনা রুশদীর লুনা, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম, কেন্দ্রীয় সহমুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকী,  বিএনপি নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজসহ সিলেট জেলা এবং বিভাগের অন্য জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশের শেষের দিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গগণবিদারী আর্তনাদে ক্ষণিকের জন্য ভারী হয় সমাবেশস্থল।      

এর আগে সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশকে ঘিরে সতর্কবস্থায় ছিল পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
এনইউ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।