ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা থাকলেও অসুসস্থতার কারণে তা করা হয়নি। তাকে হাজির করার পরবর্তী তারিখ দেওয়া হয়েছে ২৪ আগস্ট।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাঈদীকে আদালতে হাজির করতে গত ৪ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে সকল প্রস্তুতি সত্ত্বেও কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাজির করা হয়নি।
তবে সাঈদীর অনুপস্থিতিতে মামলার সংক্ষিপ্ত শুনানি করে ২৪ আগস্ট তাকে হাজির করার জন্য আবারও কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
একই সঙ্গে সাঈদীসহ গ্রেপ্তার হওয়া অন্য চার শীর্ষ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মামলায় তাদের আইনজীবীদের করা সবগুলো রিটের শুনানি ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।
এদিকে আজ জামায়াতের আইনজীবীরা সাঈদীর পক্ষে নতুন করে দুটি পিটিশন দাখিল করেন। এ দুটি হচ্ছে- অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকার কারণে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করা এবং তার পক্ষে একজন আইনজীবীকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া।
এ নিয়ে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় ট্রাইব্যুনালে মোট ৮টি পিটিশন দায়ের করেছেন জামায়াতের আইনজীবীরা।
সবগুলো পিটিশনের ওপরই ২৪ আগস্ট শুনানি হবে বলে জানান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে তার সঙ্গে আরও ছিলেন বিচারক প্যানেলের সদস্য এটিএম ফজলে কবির।
এর আগে, ৪ আগস্টের শুনানির দিন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরাসরি জড়িত ছিলেন এমন দুটি সুনির্দিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরেন।
প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে- পিরোজপুর জেলার চিতলিয়া গ্রামে ১৯৭১ সালের ৮ মে দুপুর ৩ টায় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আলমগীর পশারী, মাহবুব পশারী, চান মিয়া, জাহাঙ্গীর পশারী এবং কাঞ্চন নামে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি লুট করে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। গ্রামের অন্য বাড়ি ঘর গুলোতেও তারা আগুন লাগিয়ে দেন। এর পর সাঈদীর নেতৃত্বে তারা গ্রামের বেশ কয়েকজন পুরুষ গুলি করে হত্যা করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২ জুন সাঈদী পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে একই জেলার টেংরাখালি গ্রামের বাড়ি ঘরে লুটপাট চালান। তারা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। গ্রামের মেয়েদের পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেন।
রেজাউর রহমান ওইদিন ট্রাইব্যুনালকে আরও জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ইজাজের সঙ্গে দেখা করে সাঈদী তার সঙ্গে আন্তরিক সর্ম্পক তৈরি করেন। নিজেকে পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
মানবতার বিরুদ্ধে এসব অপরাধের অভিযোগ এনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতারের আবেদন জানান সৈয়দ রেজাউর রহমান।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করে, অন্য মামলায় এরই মধ্যে কারাবন্দি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময় ১০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০