ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জুন ২০২৫, ০১ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

‘আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না’: এ্যানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৯, জুন ২৬, ২০২৫
‘আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না’: এ্যানি

ঢাকা: বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

তিনি বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না নীতিটির ওপর জোর দেন এবং জানান, এ নীতি অনুসরণ করে বিএনপি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সার্কের উদাহরণ টেনে বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আঞ্চলিক আলাপ-আলোচনা ও সমাধানের একটি মঞ্চ। তবে, তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার সার্ককে অকার্যকর করে একটি দেশকে (ভারত) প্রাধান্য দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করবে এবং এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ দল হিসেবে দেশের সংকটময় মুহূর্তে সঠিক বার্তা দিয়েছে। তিনি খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে মানুষকে আশ্বস্ত করেন। বিশেষ করে, আগস্টের ৫, ৬, ৭ ও ৮ তারিখের অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের প্রতি মানুষের ঘৃণা ও হামলার ঘটনায় তারেক রহমান ঐক্যের ডাক দিয়ে সব রাজনৈতিক দল ও দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

এ্যানি আরও বলেন, গত ১৭ বছরের ‘দুঃশাসন’ সত্ত্বেও, তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় দেশে বড় ধরনের কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তারেক রহমানের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মানের মূল কারণ এটাই এবং এ আস্থা থেকেই বিএনপি ভরসা করে যে, আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

এ্যানি অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার ‘রক্তচক্ষু’ দেখিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষকে ঘায়েল করেছে, যার ফলে দেশের রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক চর্চার কোনো সুযোগ ছিল না।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভোটের কোনো পরিবেশ ছিল না, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট হয়েছে এবং ২০২৪ সালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নির্বাচন করা হয়েছে। তার মতে, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ কখনোই প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী ছিল না।

তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলকে গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নমুখী হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজের হাতে অস্ত্র ধরে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয়।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বা খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে কোনো ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ বা স্বৈরাচারী মনোভাব ছিল না।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির চলমান আন্দোলন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর বর্তমান সরকারও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছে বলে উল্লেখ করে এ্যানি বলেন, বিএনপির ৩১ দফা অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ‘১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবে না’ তারেক রহমানের এ প্রস্তাবটির প্রশংসা করে এ্যানি এটিকে দেশের জন্য তারেক রহমানের রাজনৈতিক ও চিন্তাভাবনার ফল বলে উল্লেখ করেন।

নিজের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ্যানি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আদালতের হাজিরা দিতে গিয়ে তাকে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রস্তুত থাকতে হতো এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকতে হতো। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজিরা দিতে গেলেও, এখন আর পালাতে হয় না। আজকেও তিনটি মামলায় হাজিরা এবং একটিতে সাক্ষ্য দিতে তিনি আদালতে গিয়েছিলেন বলেও জানান।

এ্যানি তার ছাত্র রাজনীতি ও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় কারফিউ জারি হয়। এ সময় তিনি ডাকসুর মেম্বার ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের চাবি তার হাতে দেওয়া হয়েছিল, যাতে প্রশাসন হামলা চালাতে না পারে। তিনি জানান, সেদিন ভোরে প্রশাসন পুরো ক্যাম্পাস ঘেরাও করে ফেলেছিল।

মিট দ্য প্রেসের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

ইএসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।